ঢাকা বলছে ‘না’, দিল্লি বলছে ‘হ্যাঁ’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করবেন। আজ শুক্রবার বিকেলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব সুব্রমানিয়াম জয়শঙ্কর।
urgentPhoto
তবে আজ সকালে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছিলেন, সফরকালে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠকের কোনো সম্ভাবনা নেই।
দিল্লিতে ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, সফরের দ্বিতীয় দিনে শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে যাবেন মোদি। এরপর যাবেন রামকৃষ্ণ মিশনে, এরপর ঢাকায় একটি কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে দুপুরের খাবার খাবেন তিনি। এরপর বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মোদি। তারপর তিনি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর মধ্যে আছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, বাংলাদেশের শীর্ষ চেম্বারের সভাপতি এবং বাংলাদেশের বামপন্থী দলগুলোর নেতৃবৃন্দ।
জয়শঙ্কর বলেন, সফরের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন। পরে তিনি ভারতের উদ্দেশে রওনা দেবেন।
এস জয়শঙ্কর আরো জানান, শনিবার সকালেই ঢাকা পৌঁছাবেন নরেন্দ্র মোদি। সফরের শুরুতেই তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর তিনি ঢাকার ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দুপুরের খাবারের পর নরেন্দ্র মোদি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শেখ হাসিনা মিলে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-গোহাটি-শিলং বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন। এরপর স্থলসীমান্ত চুক্তিবিষয়ক কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন তাঁরা। পরে বৈঠকে বসবেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। বৈঠক শেষে স্থানীয় বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এরপর বিকেলে প্রেস ব্রিফিং করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। রাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজনে নৈশভোজে যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিফিংয়ের শুরুতে সুব্রমানিয়াম বলেন, ‘এর আগে যারা আমার ব্রিফিং কভার করেছেন, তাঁরা জানেন, আমি বিনা প্রয়োজনে কোনো বিষয়ে বিশেষণ ব্যবহার করতে খুবই সতর্ক থাকি। তবে এ ক্ষেত্রে (মোদির বাংলাদেশ সফর) আমি এটিকে (মোদির বাংলাদেশ সফর) ‘ঐতিহাসিক’বলতে চাই। এর কারণ এ সফরের মূল উপলক্ষ স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। আপনারা জানেন, এটা দীর্ঘতম স্থলসীমান্ত।...এই অর্জন সাধারণ নয়।’ তিনি বলেন, ‘স্থলসীমান্ত চুক্তির নিষ্পত্তি এবং এর আগে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির মাধ্যমে আমরা প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমানার বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছি।এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব জানান, মোদির সফরে দুটি ধারণার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এর প্রথমটি নেইবারহুড ফার্স্ট (প্রতিবেশী আগে) নীতি। এটা অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির (পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক) অংশ। তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির এই বাংলাদেশ সফরে সব থেকে বড় ইস্যু হচ্ছে স্থলসীমান্ত চুক্তি।
জয়শঙ্কর জানান, মোদির এই সফরে মুলত দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সুরক্ষা, মাদক পাচার, অনুপ্রবেশ রোধসহ বিভিন্ন একাধিক ইস্যুতে আলোচনা হবে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহন নিয়েও আলোচনা হবে। বিশেষ করে পানিপথের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহনের ওপর জোর দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ইন্টারনেট ও টেলিকম ব্যাবস্থার উন্নতি প্রসঙ্গে কথা হবে।
এস জয়শঙ্কর বলেন, ইতোমধ্যে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৮৬০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১৫টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে সাতটি প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ, বাকি আটটির কাজ চলছে। মূলত বাংলাদেশের সঙ্গে পোর্ট, রোড, স্বাস্থ্য, রেলওয়ে ব্যাবস্থার দিকে ভারত গুরুত্ব দেবে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে।
বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো ভারতে দেখানো হবে কিনা সেই বিষয়ে জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভারতের একটি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি দল বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকেই সরকারি নীতির ভিত্তিতে সবকিছু খতিয়ে দেখে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে আজ সকালে ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, আগামীকাল ৬ জুন নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। দুদিনের সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি সুধী সমাবেশে বক্তৃতা দেবেন। তাঁর সফরকালে কলকাতা-আগরতলা এবং ঢাকা-গুয়াহাটি বাস সার্ভিস, খুলনা-মংলা ও কুলাউড়া শাহবাজপুর রেল সংযোগ পুনর্বহাল, শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রভবন, বর্ডার হাটসহ বেশ কিছু কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে।