হাতকড়া পরিয়ে বিজিবি সদস্যের ছবি প্রকাশ করল মিয়ানমার
তিনদিন আগে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা (বিজিপি) বাংলাদেশের যে সীমান্তরক্ষীকে ধরে নিয়ে গেছে, তার ছবি প্রকাশ করেছে বিজিপি।
বিজিপির মুখপত্র ‘দ্যা গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’ গত বৃহস্পতিবার হাতকড়া পরিহিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাকের একটি ছবি প্রকাশ করেছে।
ইংরেজিতে প্রকাশিত দৈনিকটিতে এ সংক্রান্ত খবরের শিরোনামটি বাংলা করলে দাঁড়ায়: বন্দুকযুদ্ধের পর সীমান্তরক্ষীদের হাতে বিদেশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আটক। খবরে বলা হয়, গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তির গায়ে ছিল বিদেশি নিরাপত্তা বাহিনীর পোশাক। তাঁর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলা-বারুদ পাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করে ওই পত্রিকা।
পত্রিকাটির ইন্টারনেট সংস্করণে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় নায়েক রাজ্জাকের মুখে রক্তের দাগ রয়েছে। এছাড়া, তাঁর সামনে একটি বন্দুক, ২২টি গুলি, চারটি মোবাইল, একটি রাম দা, একটি চাকু, দুটি টর্চলাইটসহ বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র রাখা হয়েছে। ছবিতে রাজ্জাককে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, রাজ্জাককে ফেরত চাওয়ার জন্য পতাকা বৈঠকের অনুরোধ করেও মিয়ানমারের কোনো সাড়া পায়নি বিজিবি।
এর আগে ১৭ জুন বুধবার বিজিবি জানায়, তাদের ওপর কক্সবাজারের টেকনাফ নাফনদীর জলসীমায় গুলি চালিয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা। এতে এক বিজিবি সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আরেক বিজিবি সদস্যকে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড ধরে নিয়ে গেছে। ওই সদস্যকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছিল বিজিবি।
৪২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ান অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু জার আল জাহিদ বলেন, ‘বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দমদমিয়া বিওপি চৌকির ৬ জনের একটি টহলদল হ্নীলা ইউনিয়নের নাফ নদীর জইল্যার দ্বীপ এলাকায় দুটি মাছধরার বিহিঙ্গী নৌকায় করে তল্লাশি চালাচ্ছিল। এ সময় মিয়ানমার বর্ডার গার্ড তাদের সীমান্ত থেকে একটি ট্রলারে করে এসে বিজিবির ওপর গুলি চালায়। এ সময় বিজিবিও পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে বিজিবির সিপাহি বিপ্লব গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আর নায়েক আবদুর রাজ্জাক নাফ নদীতে পড়ে গেলে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়।’
ঘটনার দিনই বিজিপিকে পতাকা বৈঠকের প্রস্তাব দেয় বিজিবি। বৈঠকের জন্য বিজিপি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সময় নির্ধারণ করলেও পরে কোনো কারণ না দেখিয়েই তা বাতিল করে দেয় বিজিপি।
এরপর আটক নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফেরত দেয়ার বিষয়ে বিজিবি বারবার পতাকা বৈঠকে আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি বিজিপি। ১৮ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কক্সবাজারের টেকনাফ স্থল বন্দর রেষ্ট হাউজে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও তাতে কোন সাড়া মেলেনি।
টেকনাফ ৪২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবজার আল জাহিদ জানান, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পতাকা বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে তখনো কোন সাড়া মিলেনি। তাঁরা তথনো মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অপেক্ষায় ছিলেন।
ওইদিনই বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের কমান্ডার কর্ণেল আনিসুর রহমান বলেন, বিজিবি সদস্য নায়েক আবদুর রাজ্জাক মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হেফাজতে রয়েছে। তিনি নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।
তিনি বলেন, নায়েক রাজ্জাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীঘ্রই বিজিপি’র সাথে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হবে।
এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘গোলাগুলির ঘটনা দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটেছে।’
এদিকে নায়েক আবদুর রাজ্জাককে বৃহস্পতিবার ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও মিয়ানমার থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এই বিষয়ে সহযোগিতা চায়। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মাইও মাইনকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব কর হয়।
রাষ্ট্রদূত মাইও মাইনকে বলা হয়, অপহৃত বিজিবি নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফেরত দিতে মিয়ানমার সরকার যাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়। তলবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত মাইও মাইন এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তিনি ওই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে অনুরোধ করবেন।