কে হচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
পানামা নথি কেলেঙ্কারির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট অযোগ্য ঘোষণার পর পদত্যাগ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তাঁর পদত্যাগের পর দেশের শাসনভার কে হাতে তুলে নিচ্ছেন এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন মুসলিম লীগ নওয়াজের (পিএমএল-এন) সরকারের প্রধান। এরপর দলটির পক্ষ থেকে কে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিচ্ছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।
পিএমএল-এন সরকারের প্রধান হিসেবে যে কাউকেই প্রধানমন্ত্রী পদের দায়িত্ব দিতে পারেন নওয়াজ। তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে দেশটির পার্লামেন্টে ভোটাভুটির সম্মুখীন হতে হবে। তবে সেখানে নওয়াজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাঁর প্রার্থী সহজেই ভোটাভুটিতে উতরে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বের তালিকায় রয়েছে বেশ কয়েকজনের নাম। তালিকায় প্রথমেই থাকছেন নওয়াজের ছোট ভাই শেহবাজ শরিফ। বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তবে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হবে। তবে নওয়াজের থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেহবাজকে বেশি যোগ্য মনে করা হলেও, বড় ভাইয়ের মতো জনপ্রিয়তা তাঁর নেই।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ থাকছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের। তাঁর সঙ্গে নওয়াজের বেশ সখ্য রয়েছে। তিনি শিয়ালকোট জেলা থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর বেশ দক্ষতার সঙ্গেই তাঁর মন্ত্রিত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের স্পিকার সর্দার আয়াজ সাদিকের নামও উচ্চারিত হচ্ছে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তাঁর প্রতি পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজের বেশ সুদৃষ্টি রয়েছে। ২০১৩ সালে লাহোর থেকে নওয়াজের দল পিএমএল-এনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানকে পরাজিত করেন তিনি। পরে অবশ্য ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে তাঁকে পদচ্যুত করা হয়। তবে পুনর্নির্বাচনে আবার জয়ী হয়ে স্পিকারের দায়িত্ব পান তিনি।
পাকিস্তানের পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী আহসান ইকবালেরও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। পিএমএল-এন পার্টির সঙ্গে অনেক সময় ধরেই যুক্ত রয়েছে তাঁর পরিবার। এর আগে শিক্ষা ও লংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন ইকবাল।
পদত্যাগের আগে নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে সর্বোচ্চ আদালত পাকিস্তানের দুর্নীতি দমন সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি ব্যুরোকে (এনএবি) ছয় সপ্তাহের মধ্যে মামলার আসামি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তাঁর সন্তানদের বিরুদ্ধে একটি মামলার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী ইশাক দার এবং আইনপ্রণেতা ও প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের জামাতা অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সফদার আওয়ানের বিরুদ্ধেও রেফারেন্স দায়েরের নির্দেশ দেন আদালত।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে পানামা নথি-সংক্রান্ত মামলাটির শুনানি চলছিল সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে। সে বেঞ্চই শুক্রবার নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণার রায় দিল।
ওই বেঞ্চের পাঁচ সদস্য হলেন—বিচারপতি আসিফ সাঈদ খোসা, বিচারপতি এজাজ আফজাল খান, বিচারপতি গুলজার আহমেদ, বিচারপতি শেখ আজমত সাঈদ ও বিচারপতি ইজাজুল আহসান। রায় পড়ে শোনান বিচারপতি এজাজ আফজাল।
এর আগে পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই মেয়াদের নির্ধারিত পাঁচ বছর পূর্ণ করতে পারেননি। মুসলিম লীগ সরকারের প্রধান নওয়াজের ভাগ্যেও তা-ই জুটল।
সুপ্রিম কোর্টের এক নম্বর কক্ষে রায় ঘোষণা করা হয়। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন মামলার আবেদনকারী আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রধান শেখ রাশিদ ও জামায়াত-ই-ইসলামীর প্রধান শেখ সিরাজুল হক।
আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণাকালে সুপ্রিম কোর্ট ও আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা নেওয়া হয়। মোতায়েন করা হয় ইসলামাবাদ পুলিশ ও পাঞ্জাব রেঞ্জার্সের প্রায় তিন হাজার সদস্যকে।