মিনায় চার বাংলাদেশি হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবের মিনায় বাংলাদেশের চারজন হাজি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে তিনজন মিনায় পদদলনে ও একজন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তবে সৌদি আরবের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে কারো নাম-পরিচয় এখনো ঘোষণা হয়নি। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে মৃত্যুর কথা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পদদলনে নিহত তিন হাজি হলেন জামালপুরের ফিরোজা খানম ও ফেনীর সোনাগাজীর দুই ভাইবোন তাহেরা বেগম ও নুরুন্নবী। এ ছাড়া অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন সুনামগঞ্জের জুলিয়া হুদা চৌধুরী।
এ ব্যাপারে হজ কাউন্সিলর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নিহত ফিরোজা খানমের ছেলে খন্দকার মাজহারুল ইসলাম আমাদের জানিয়েছেন যে তাঁর মা পদদলিত হয়ে মারা গেছেন। ফিরোজা খানম তাঁর ছেলের সঙ্গে হজে এসেছিলেন।’
এ ছাড়া ফেনীর সোনাগাজীর বাসিন্দা তাহেরা বেগম ও নুরুন্নবী পদদলনে নিহত হয়েছেন বলে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি।
তবে পদদলনে নয়, মিনায় হজ পালন শেষে হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সুনামগঞ্জ শহরের হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা বদরুল হুদা মুকুলের স্ত্রী জুলিয়া হুদা চৌধুরী। জুলিয়া চৌধুরীর বড় ছেলে নজরুল হুদা রচি জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর মক্কায় হজ পালন করতে যান তাঁর বাবা-মা। গতকাল প্রচণ্ড গরমে তিনবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন তাঁর বাবা। সে জন্য মিনায় পাথর নিক্ষেপ করার সময় স্ত্রীর সঙ্গে যেতে পারেননি তিনি। তাই জুলিয়া চৌধুরী একাই সেখানে যান। পাথর নিক্ষেপ শেষে দুর্ঘটনার সময় চাপাচাপিতে পড়ে যান তিনিও। তবে ওই দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়নি। তিনি পাথর নিক্ষেপ শেষে তাঁবুতে ফিরে এসে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে তাঁবুর পাশে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা জুলিয়া হুদাকে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সেখানেই হৃদরোগে তাঁর মৃত্যু হয়।
সৌদি আরব থেকে মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান গতকাল এনটিভি অনলাইনকে আরো বলেন, ‘আহত ও নিহত হাজিদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক আছে কি না, তা জানার জন্য আমাদের কর্মকর্তারা বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। হতাহত হাজিরা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আহত হাজিদের অনেকে মারাও যাচ্ছেন। সৌদি সরকার হতাহতদের ব্যাপারে সম্পূর্ণ তথ্য দেবে। এরপরই আমরা বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পর্কেও নিশ্চিত তথ্য পাব। এর আগে পুরো চিত্রটা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
হজ পালনের সময় মিনায় পদদলিত হয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৭১৭ হাজি মারা গেছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ হাজি।
তাঁবুর শহর মিনায় গতকাল বৃহস্পতিবার এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় মিনা থেকে জামারায় পাথর ছোড়ার জন্য লাখো হাজি যাচ্ছিলেন। ২০৪ নম্বর সড়ক থেকে ২২৩ নম্বর সড়কের সংযোগস্থলে হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায় মিছিল। কিন্তু পেছন থেকে যাঁরা আসছিলেন একই গতিতে, তাঁরা বুঝতে পারেননি এই থেমে যাওয়ার বিষয়টি। প্রবল গতিতে তাঁরা সামনেই অগ্রসর হতে থাকেন। বার্তা সংস্থা আলজাজিরা জানিয়েছে, এ সময় মাঝখানের ভিড়ে পিষ্ট ও পদদলিত হন শত শত মানুষ। সামনে বা পেছনে যাওয়ার কোনো উপায় নেই তাঁদের, একমাত্র পরিণতি ছিল শ্বাসরুদ্ধ হয়ে যাওয়া।
সৌদি আরবের বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ এ জন্য কাণ্ডজ্ঞানহীন একদল মানুষকে দায়ী করেছে।