সম্পাদকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান
দৈনিক পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর সম্পাদকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানহানি আইন ও দেশদ্রোহীতার আইন দুটি আন্তর্জাতিক মান পরিপন্থী। তাই সরকারের উচিত এগুলো বাতিল করা।
গতকাল শনিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় পর্যন্ত ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ৫৪টি মানহানির মামলা এবং ১৫টি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের হয়েছে। আর এসব মামলার কারণ হচ্ছে, দীর্ঘদিন আগে দেশটির সামরিক বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ করা। গত ৬ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত একজন আইনজীবীর করা মামলায় মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের সর্বাধিক পঠিত বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ৫৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়া পত্রিকাটির কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলা করা হয়েছে। প্রতিটি ফৌজদারি মামলার জন্য দুই বছর করে এবং রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় তিন বছর করে সাজা হতে পারে।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র দুটির সম্পাদকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনার অর্থ হলো স্পষ্টভাবে দেশটির গণমাধ্যমকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা। দেশটির জাতীয় সংসদের প্রায় সব আসনের এবং সব জাতীয় নির্বাহী কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের উচিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। তা না হলে বাংলাদেশ স্বৈরাচারী দেশে পরিণত হতে পারে।’
মাহফুজ আনাম ও মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা এসব মামলা আসলে বহু বছর ধরে চলে আসা বাংলাদেশের স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর সুসংগঠিত হামলার অংশবিশেষ।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সরকার দেশটির সমালোচনাকারী গণমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, সম্পাদক ও ব্লগারদের কারাগারে পাঠিয়েছে এবং সরকারের বিপক্ষে প্রতিবেদন তৈরি করায় আদালত অবমাননার দায়ে সাংবাদিকদের অভিযুক্ত করেছে। রাষ্ট্রদ্রোহ ও কথপোকথন প্রকাশের দায়ে কোনো রকম বিচার ছাড়াই ২০১৩ সাল থেকে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রতিবেদনের কারণে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছে সরকার। গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন যে, এই পত্রিকাদুটিতে বিজ্ঞাপন না দিতে বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে আল-জাজিরায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধ থেকে এই ধরনের নির্দেশনা পেয়েছেন তাঁরা।
ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘মানহানিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। যদি কোনো সংবাদপত্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারো সম্মানহানি করার লক্ষ্যে মিথ্যা খবর ছাপায় তাহলে একটি সামাজিক মানহানির মামলা দায়ের করা যেতে পারে। তবে নিজেদের লেখার জন্য কোনো সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানোর নীতি থেকে বাংলাদেশের সরে আসা উচিত।’
এই ধরনের অস্পষ্ট ও বিশাল ব্যাপ্তির রাষ্ট্রদ্রোহ আইন রহিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।