বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্য দূত হলেন রুশনারা আলী
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সংসদ সদস্য রুশনারা আলীকে বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্য দূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে ডেভিড ক্যামেরন সরকার।
বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের শুরুতেই লেবার পার্টির প্রভাবশালী এ সংসদ সদস্যকে মনোনয়নের বিষয়টি এলো বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি। ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্ল্যাক আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আমি আনন্দিত যে, বাংলা নববর্ষের শুরুতেই রুশনারা আলীকে বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্য দূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন।’
বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল এবং এখানে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর বড় ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার জানান, তিনি ও তাঁর দল রুশনারা আলীর সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। এর ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় ও সুদূরপ্রসারী হবে।
অ্যালিসন ব্ল্যাক আশাবাদ ব্যক্ত করেন, রুশনারা আলী এক্ষেত্রে সফল হবেন।
বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্য দূত মনোনীত হওয়ায় রুশনারা আলীও আনন্দিত। তিনি বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক ও স্থায়ী সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ব্রিটিশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বোর্ড মনে করে, বাংলাদেশ একটি উদীয়মান বাজার। এখানে টেকসই বাণিজ্য ও বিনিযোগের পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে।’
বাংলাদেশের বাণিজ্য খাতের উন্নতি এবং দেশটির জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় ব্রিটিশ সরকার কার্যকরভাবে সহায়তা করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন রুশনারা আলী।
বাংলাদেশ যে সব সময়ই তাঁর কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে তাও উল্লেখ করেছেন লেবার পার্টির এ সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় এক-তৃতীয়াংশই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক এবং আমিই প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে ব্রিটিশ সংসদে নির্বাচিত হয়েছি।’
ব্রিটেন বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্যতম এবং দেশটির সঙ্গে গভীর ও দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে। রুশনারা আলী দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিযোগ সম্পর্ক দৃঢ়তর করতে এবং দুই দেশের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আন্তসম্পর্ক জোরদারেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন বলে ব্রিটিশ হাইকমিশনার তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।
‘রুশনারা আলী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যেমন তাঁর অভিজ্ঞতাকে এখানে কাজে লাগাতে পারবেন, ঠিক তেমনি এ দেশের পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নেও ব্রিটেনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারবেন।’
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদারে ২০১২ সাল থেকে এ ধরনের কর্মসূচি (ক্রস-পার্টি ট্রেড এনভয়) চালু আছে। এখানে যাঁরা দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা সবাই অবৈতনিক। বর্তমানে সংসদের মোট ২৪ জন সদস্য ও তাঁদের সহকর্মীরা বিশ্বের ৫০টি দেশে কাজ করছেন। দেশ ও খাত নির্বিশেষে যোগ্যতা, দক্ষতা ও জ্ঞান অনুযায়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এসব দূত মনোনয়ন দিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিয়ানিবাজার উপজেলার মেয়ে রুশনারা আলী। তিনি লন্ডনের বেথনাল গ্রিন বো এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদীয় রাজনীতিতে তিনি শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ছায়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি ছিলেন অর্থবিষয়ক কমিটির সদস্য। বর্তমানের তিনি জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে বাংলাদেশে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এখানে প্রায় ১০০ ব্রিটিশ কোম্পানি কাজ করছে। তারা এখানে ব্যাংক, জ্বালানি, অবকাঠামো, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট কাজ করছে।
এর বাইরে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের বড় ক্রেতা ব্রিটেন। দেশটিতে গত পাঁচ বছরে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে গেছে।