তুরস্কে অভ্যুত্থানচেষ্টার পেছনে কারা
তুরস্কের সেনাবাহিনীর একটি অংশের অভ্যুত্থানচেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। গতকাল শনিবারই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অভ্যুত্থান-চেষ্টার মধ্যেই এর জন্য একজনকে দায়ী করেন এরদোয়ান।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এনপিআর জানায়, অভ্যুত্থানের জন্য রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দায়ী করা ব্যক্তিটি সামরিক বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা নন; বরং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় বসবাসরত তুরস্কের ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেন।
ফেতুল্লা গুলেনকে উদ্দেশ করে গতকাল শনিবার এরদোয়ান বলেন, ‘পেনসিলভানিয়ার জন্য আমার বার্তা, এই জাতির বিরুদ্ধে আপনি যথেষ্ট ষড়যন্ত্রে জড়িয়েছেন। সাহস থাকলে দেশে ফিরে আসুন।’
এরদোয়ান ও গুলেন ভালো বন্ধু ছিলেন। দুজনই ছিলেন সহনশীল ইসলামপন্থী। নিজের সমর্থকদের এরদোয়ানের পক্ষে কাজ করান গুলেন। আবার গুলেনের জন্যও কাজ করেন এরদোয়ান। বিশ্বজুড়ে ইসলামিক স্কুল চালান গুলেন, যার মধ্যে শতাধিক স্কুলই যুক্তরাষ্ট্রে। তবে ২০১৩ সালে তাঁদের সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়। এরদোয়ান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়। এরদোয়ানের বিশ্বাস, বিচার বিভাগে থাকা গুলানের মিত্ররা এর জন্য দায়ী। বিচার বিভাগে গুলেনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত অনেককে পদচ্যুত করা হয়। ৭০ বছর বয়সী গুলেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া থেকেই তাঁর কার্যক্রম চালান। বিশ্বজুড়ে ১০ থেকে ৮০ লাখ অনুসারী গুলেনের।
গতকাল শনিবার সকালেই অভ্যুত্থানে যুক্ত থাকার অভিযোগ নাকচ করেছেন ফেতুল্লা গুলেন। অভ্যুত্থানে কোনো ভূমিকা নেই বলে দাবি তাঁর।
অভ্যুত্থানের আগে থেকেই অবশ্য তুরস্কে বিভিন্ন আইনি জটিলতায় জড়ানো হয়েছে ফেতুল্লা গুলেনকে। তুরস্কের আনদালু নিউজ জানায়, গত বছর অক্টোবরে ইস্তাম্বুল শহরের একটি আদালত ফেতুল্লার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তুরস্কের সরকার উৎখাত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
শুক্রবার অভ্যুত্থানচেষ্টার পর ফেতুল্লা গুলেনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে পাঠানোর অনুরোধ করেছে এরদোয়ান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, গুলেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে হবে।
এদিকে, তুরস্কের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আনদালু জানায়, সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটির বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল ওকিন ওজটার্ককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সামরিক কর্মকর্তা মার্কিনপন্থী এবং বিশেষ ষড়যন্ত্রে যুক্ত বলে অভিযোগ আছে। একই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন তুরস্কের স্থলবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মেতিন ইগিনতলি।
এর আগে গতকাল শনিবার অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত সন্দেহে প্রায় তিন হাজারের মতো সেনাকে আটক করা হয়। অনেক সেনা কর্মকর্তাকে পদচ্যুত করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক হাজার বিচারককেও বরখাস্ত করা হয়েছে।