খোঁজ নিচ্ছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারের সময় গতকাল সোমবার খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়েই মন্তব্য করবে বলে জানানো হয়েছে।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে পুলিশের সামনেই হামলা চালানো হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে। এ সময় বহরের সাত-আটটি গাড়িসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের আলোচনা চলছে এসব নিয়ে।
জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি আজ মঙ্গলবার সিটি নির্বাচনের পরিবেশ ও সহিংসতা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
পুরো বিষয়ে জেনে মন্তব্য করবেন মেরি হার্ফ
খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় চালানো সহিংসতা বিষয়ে ভালোভাবে জেনে মন্তব্য করবেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মেরি হার্ফ। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
ঢাকায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। তিনি বলেন, ‘আজ (সোমবার) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে দেশটির তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া হামলার শিকার হয়েছেন। এ ব্যাপারে আপনাদের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না?’
এই প্রশ্নের জবাবে মেরি হার্ফ বলেন, ‘আমি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো দেখিনি। এখন আপনার জন্য দেখে বলতে হবে।’
প্রশ্নকর্তা আবারও বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) সেখানে সিটি নির্বাচনের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এর আগে বৃহস্পতিবার আমি আপনাকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদের বিষয়ে....’
মুখপাত্র বলেন, ‘হ্যা, এ বিষয়ে আমি কোনো কিছু না শুনেই আজ এসেছি, তবে আপনার জন্য আবার খোঁজ নেব। তাহলে বাংলাদেশ বিষয়ে আজ এ পর্যন্তই, ঠিক আছে?’
তবে প্রশ্নকর্তা সাংবাদিক আবারও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশে সহিংসতা কমানোর আহ্বান জানিয়েছিল এবং আমরা দেখেছি যে, এরপর দৃশ্যপটে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি কিছুটা ভয়াবহ কারণ বিরোধীদলের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। তো বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের এই উত্তেজনা প্রশমন সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?’
এই প্রশ্নের জবাবে মেরি হার্ফ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা আগেও আপনাদের বলেছি। এ মুহূর্তে আমার কাছে নতুন কোনো বিশ্লেষণ নেই। কিন্তু তারপরও, এ ব্যাপারে আমরা যদি কিছু জানাতে পারি তাহলে আমরা খুশি হব।’
এরপর অন্য দেশের প্রসঙ্গে চলে যান মুখপাত্র। কিন্তু এর মধ্যে ওই সাংবাদিক বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো কিছু বলার অনুমতি চান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাসভবন থেকে পুলিশী নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়েছে। গতকাল (রোববার) সরকার এটা করেছে। এরপর তারা হামলার শিকার হন এবং তার কার্যালয় থেকেও পুলিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। যদি আপনি কিছু....’
মেরি হার্ফ উত্তর দেন, ‘ঠিক আছে, এই বিষয়টিও আমি আপনার প্রশ্নের সঙ্গে যোগ করে নিলাম।’
লক্ষ্য রাখবে জাতিসংঘ
একই দিন জাতিসংঘের সদরদপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিককে সাংবাদিক ম্যাথু রাসেল লি বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। এ ব্যাপারে লক্ষ রাখবেন বলে জানিয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ শেষ করেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে ম্যাথু রাসেল লি বলেন, ‘আমি জানি, বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আপনি একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এখন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়েছে এবং বিএনপি দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছে, হরতাল মানে নিশ্চয় আপনি জানেন, যানচলাচল বন্ধ রাখা। তো এই বিষয়ে উত্তেজনা প্রশমন করতে জাতিসংঘ কি কোনো পদক্ষেপ নেবে?’
জবাবে মুখপাত্র বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখব এবং সেখানে কী হয়েছে সে বিষয়েও লক্ষ রাখব।’
যুক্তরাজ্যের উদ্বেগ
বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় সেখানে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য। কোনো রকম সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন ছাড়াই নির্বাচনী প্রচার চালানোর পরিবেশ সৃষ্টির ওপর জোর দিতে বলেছে দেশটি।
বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, গত দুই সপ্তাহে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর সময় যেসব সহিংস ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
রবার্ট গিবসন আরো বলেন, ‘কোনো রকম সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন ছাড়াই যেন নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যায় সেদিকে লক্ষ রাখা সব রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।’
আগামী ২৮ এপ্রিল নির্বাচনে সত্যিকারের গণতন্ত্রের প্রতিফলন ঘটবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।