সেনাবাহিনী আমার দল ধ্বংস করতে চায় : ইমরান খান
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান দেশটির সেনাবাহিনী নিয়ে বিস্তর অভিযোগ করেছেন। তার মতে, পিটিআইকে ধ্বংস করতে সেনাবাহিনীর প্রভাবশালী ঊর্ধ্বতন ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি, তারা রাজনৈতিক দলটিকে ধ্বংস করতে প্রকাশ্যে কাজ করছে। একইসঙ্গে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করে জেলে পাঠানো হবে বলেও অভিযোগ করেছেন ইমরান খান।
আজ রোববার (৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা।
এর আগেও ইমরান খান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস করার অভিযোগ তুলেছিলেন। তবে, শনিবার রাতে লাহোরের বাড়িতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেনাবাহিনী আমাকে ও আমার রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস করতে চাই। তারা এখন প্রকাশ্যেই এটি করছে। আমার মতে, এটি এখন আর গোপনীয় নয়।’
আল-জাজিরা জানিয়েছে, পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে ক্ষমতার পেছনে রয়েছে সামরিক বাহিনী। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশ পরিচালনা করছে তারা। এই অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেননি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র।
গত বছরের এপ্রিলে আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা ছাড়তে হয় ইমরান খানকে। এরপর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। তবে, এখনও জরিপে পাকিস্তানে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খান। গত মাসে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর সেনাবাহিনীর স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এর জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সমর্থক ও রাজনৈতিক দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে সেনাবাহিনী।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ২২০ মিলিয়ন জনগণের পাকিস্তানে অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে আর্থিক সংকটে থাকা দেশটি রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি দেখেছে। এই সংকট নিয়ন্ত্রণে মোকাবিলা করতে লড়াই করছে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার।
এদিকে, ইমরানের গ্রেপ্তারের পর হওয়া সহিংসতা ও সেনাবাহিনীর স্থাপনায় হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে পিটিআই দলের কয়েকজন সদস্যসহ কয়েক ডজনের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। বিচারের মুখোমুখি হওয়াদের রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
ইমরান খান বলেন, ‘আমাকে লক্ষ্য করে এই অপারেশন চালানো হচ্ছে। তারা আমাকে জেলে রাখতে চাই। আগামী নভেম্বরে হওয়া নির্বাচনে আমাকে বিজয়ী হওয়ার থেকে রুখে দিতেই তারা এমনটি করছে।’
ক্ষমতা হারানোর পর থেকে দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিটিআই প্রধান। জামিনে আসা ইমরান খান বলেন, ‘তারা আমাকে সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন করতে চাই। এতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাদের একমাত্র আশাই এটি। এ নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।’
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, পাকিস্তানের সামরিক আদালতে বিচারের দিক থেকে অস্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। তাদের প্রক্রিয়াটিও যথাযথ নয়। জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি ও অন্যায় বিচারের পরে মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা দিয়েছে তারা।
ইমরানকে হটিয়ে দিতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই গভীরভাবে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। পিটিআই প্রধান বলেন, ‘আমার পার্টির দুজন সিনিয়র সদস্যকে আইএসআই থেকে ডাকা হয়েছিল। যখন তারা সেখানে গিয়েছিল তারা তাদেরকে মুখ বন্ধ রাখতে বলে। ওই দুজন পিটিআই থেকে সরে না গেলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়।’
ইমরান খান বলেন, ‘আমি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। কীভাবে এই সংকট থেকে বের হওয়া যায় সে বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছি। তবে, তাদের কোনো সাড়া পায়নি।
২০২২ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন জেনারেল আসিম মুনির। এর আগে তিনি আইএসআইয়ের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে, ২০১৯ সালে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই তাকে সেই আসন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। গত বছরের এপ্রিলে আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হারান ইমরান খান। দেশটির সামরিক বাহিনীর শীর্ষদের কারণে তিনি ক্ষমতা হারান বলে অভিযোগ করেছিলেন। তবে, সেই অভিযোগ অস্বীকার করে সেনাবাহিনী।
কি কারণে ২০১৯ সালে মুনিরকে আইএসআই প্রধানের পদ থেকে সরানো হয়েছিল সে বিষয়ে ওই সময় কোনো মন্তব্য করেনি পাক সরকার। তবে, গতকাল এ নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন ইমরান খান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সম্ভবত মুনিরের আমার প্রতি একটি ক্ষোভ আছে। কারণ, আমি তাকে পদত্যাগ করতে বলেছি।’
কেন মুনিরকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি জানেন, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমি অনুভব করেছি, কীভাবে গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালনা করা হয় ... এতে আমার সমস্যা ছিল।’ এর বাইরে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
ইমরানের ক্ষমতা হারানোর পর তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শেহবাজ শরিফের দল মুনিরকে সেনাপ্রধান করেন।
আইএসআই প্রধান হিসেবে মুনিরের অপসারণের কথা উল্লেখ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখনই তার এ নিয়ে কোনো সমস্যা থাকার কথা না। কারণ, তিনি এখন সেনাপ্রধান। তাহলে কেন সে ক্ষোভ পোষণ করবে?’