কে-পপ বয় ব্যান্ড বিটিএসের ১০ বছর পূর্ণ
দক্ষিণ কোরিয়ান কে-পপ বয় ব্যান্ড বাংতান বয়েজ (বিটিএস) ২০১৩ সালের ১৩ জুন যাত্রা শুরু করে। বিগহিট মিউজিকের অধীনে টু কুল ফর স্কুল অ্যালবাম নিয়ে পুরো বিশ্বের সামনে আত্মপ্রকাশ করে স্বপ্নবাজ সাত কিশোর।
তারা হলেন—দলনেতা কিম নামজুন (আরএম) র্যাপার ও ড্যান্সার, কিম সোকজিন (জিন) ভোকাল, ভিজ্যুয়াল ও ড্যান্সার, মিন ইয়ঙ্গি (সুগা) লিড র্যাপার ও ড্যান্সার, জং হোসোক (জে-হোপ) মেইন ড্যান্সার ও র্যাপার, পার্ক জিমিন (জিমিনি) মেইন ড্যান্সার ও লিড ভোকাল, কিম তেহিয়্যূং (ভি) ভোকাল, ভিজ্যুয়াল ও ড্যান্সার এবং জন জংকুক (জংকুক) মেইন ভোকাল ও লিড ড্যান্সার। তাদের ফ্যান বা ভক্তদের বিটিএস আর্মি বলা হয়ে থাকে।
আত্মপ্রকাশের পর ২০১৪ সালে বিটিএস প্রকাশ করে তাদের প্রথম কোরিয়ান স্টুডিও অ্যালবাম ডার্ক অ্যান্ড ওয়াইল্ড ও জাপানিজ স্টুডিও অ্যালবাম ওয়েক আপ। তাদের দ্বিতীয় স্টুডিওর অ্যালবাম উইংস (২০১৬) ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম, কোরিয়ায় যেটির ১০ লাখ কপি বিক্রি হয়।
‘লাভ ইয়োরসেল্ফ : হার’ আলব্যামটি দিয়ে ২০১৭ সালে পুরো বিশ্বের সংগীত জগতে আলোড়ন তোলে এই সাত তরুণ। বিটিএস প্রথম কোরিয়ান গ্রুপ হিসেবে ‘মাইক ড্রপ’ গানটির জন্য রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা থেকে সার্টিফিকেট পায় এবং ‘লাভ ইয়োরসেল্ফ : টিয়ার’ (২০১৮) অ্যালবামটি বিলবোর্ড ২০০ চার্টে প্রথম স্থান দখল করে; আর এরপরের যাত্রা তো এক ইতিহাস।
২০১৭ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর বিলবোর্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে টপ সোশ্যাল আর্টিস্টের খেতাব অর্জনসহ ২০১৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ‘নেক্সট জেনারেশন লিডারস’ খেতাব এবং একই বছর ফোর্বস কোরিয়া পাওয়ার সেলিব্রিটির তালিকায় শীর্ষ স্থান অর্জনের মতো অগণিত প্রাপ্তি বিটিএসের খাতায়।
২০২০ ও ২০২১ সালেও দেখা যায় তাদের এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা। করোনা মহামারির কঠিন সময়েও ২০২০ সালের আগস্টে বিশ্ববাসীকে বিটিএসের সদস্যরা উপহার দেন তাদের প্রথম ইংরেজি একক গান ‘ডায়নামাইট’; যা দিয়ে প্রথমবারের মতো তারা জায়গা করে নেন বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড সিঙ্গেলসের শীর্ষে!
বিটিএস পরপর দুইবার (২০২১/২০২২) সেরা পপ ডুও/গ্রুপ পারফরম্যান্স বিভাগে গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। তারপর নিয়মিতভাবে তাদের অ্যালবাম বের হয়েছে; আর তাদের ডিএনএ, আইডল, বাটার ও লাইফ গোজ অন বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ভক্তের হৃদয় মাতিয়েছে।
এ ছাড়া, ২০২১ সালে বিটিএস তৃতীয়বারের মতো জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, ২০২২ সালে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন ব্যান্ডটির সদস্যরা।
এ ছাড়াও, ২০২১ সালে আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ড (এএমএ) অনুষ্ঠানে ‘আর্টিস্ট অব দ্য ইয়ার’ শীর্ষক পুরষ্কার জিতে বিটিএস প্রথম এশিয়ান ব্যান্ড হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বিটিএস সংগীত ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ারের ক্ষেত্রে ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’ এ ২৩টি রেকর্ড অর্জন করেছে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ছাড়াও বিটিএস স্পটিফাই, টুইটার ও ইউটিউবের জন্য আরও কয়েকটি রেকর্ড ভেঙেছে।
গত দুই বছর যাবত বিশ্বের সবচেয়ে বেস্ট-সেলিং শিল্পীগোষ্ঠীর তকমা নিজেদের দখলে নিয়ে রেখেছে কে-পপ গ্রুপ বিটিএস। শুধু গানই নয়, গানের তালের সঙ্গে তাদের নাচগুলোও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাছাড়া, তাদের ইউনিক ফ্যাশন সেন্স এবং তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্যও খ্যাতি কুড়িয়েছে এই দলটি।
সেনাবাহিনীতে যোগদান
জনপ্রিয়তায় সমসাময়িক বা ইতোপূর্বেরও অনেক বিখ্যাত ব্যান্ড দলকে টেক্কা দিলেও, দেশের আইনের ঊর্ধ্বে যাওয়ার সুযোগ নেই কে-পপ ব্যান্ড বিটিএস-এরও।
বিটিএসের সদস্যরাও তাই দক্ষিণ কোরিয়ার বাধ্যতামূলক সামরিকসেবায় যোগ দেওয়ার নিয়মকে সম্মান জানিয়ে ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকার সময় এক এক করে সামরিক বাহিনীতে যোগদান শুরু করেন।
দুই বছরের জন্য প্রথমে ব্যান্ডটির সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য জিন ও এরপর জে-হোপ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। এরপর ব্যান্ডের অন্য সদস্যরাও তাদের নিজ নিজ পরিকল্পনা অনুযায়ী বাধ্যতামূলক সামরিক দায়িত্ব পালন করবেন বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
এ বছর আত্মপ্রকাশের ১০ বছরে পা দিল বিটিএস। চলতি বছরের ৮ জুন ব্যান্ডটি আপোবাংপো-১০ এর জন্য বেশ কয়েকটি ছবি ও বিহাইন্ড দ্য সিন ভিডিও উন্মোচন করেছেন। আপোবাংপো হলো চলতি বছরের বিটিএস ফেস্তা। যদিও আপোবাংপোর উদ্দেশ্য হলো ‘আর্মি ফরেভার, বিটিএস ফরেভার।’
বিটিএস ফেস্তা একটি মাসব্যাপী অনলাইন ইভেন্ট। যা কে-পপ ব্যান্ডটি তাদের ভক্তদের সঙ্গে প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে আয়োজন করে।
গত ৯ জুন ‘টেক টু’ শিরোনামে একটি ডিজিটাল একক প্রকাশ করেছে বিটিএস। এ ছাড়া, আগামী ৯ জুলাই ‘বিয়ন্ড দ্য স্টোরি : টেন ইয়ার রেকর্ড অব বিটিএস’ শিরোনামে ৫৪৪ পৃষ্ঠার একটি স্মৃতিকথা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।