ঘূর্ণিঝড়ে এক লাখ লোককে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে ভারত ও পাকিস্তান
আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারত ও পাকিস্তানে আঘাত হানতে পারে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে এশিয়ার পারমাণবিক ক্ষমতাধর প্রতিবেশী দেশ দুটি। দুদেশ মিলিয়ে এক লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার (১৪ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় আঘাত হানবে এমন এলাকাগুলো থেকে এক লাখের বেশি বাসিন্দাকে সরিয়ে নিয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। আবহাওয়া পূর্বাভাসকারীরা সতর্ক করে আজ জানিয়েছেন, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়টি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে। বাড়িঘর থেকে শুরু করে বিদ্যুতের লাইনগুলো ভেঙে যেতে পারে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থলভাগে আঘাত হানবে আরব সাগরে সৃষ্ট হওয়া এই ঘূর্ণিঝড়টি। এটি ক্রমশই আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
এএফপি জানিয়েছে, ভারতের গুজরাটের মান্দবি থেকে পাকিস্তানের করাচি পর্যন্ত ৩২৫ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব থাকবে। স্থলভাগে আঘাত হানার সময় তীব্র বাতাস, জলোচ্ছ্বাস ও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ পূর্বাভাস দিয়ে বলছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঘূর্ণিঝড়টি জাখাউয়ের কাছে আঘাত হানবে। ঐতিহ্যবাহী কাদা এবং খড়ের ঘরবাড়িগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
পূর্বাভাসকারীরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ইতোমধ্যে সাগরে বাতাসের গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার (১১২ মাইল)। তবে, স্থলভাগে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ১২৫ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার থাকতে পারে। তবে, বাতাসের গতি ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
ভারতের গুজরাটে ত্রাণ কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা সি.সি. প্যাটেল বলেন, ‘উপকূলীয় ও নিচু এলাকা থেকে ৪৭ হাজারেরও বেশি লোককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আগামীকালের মধ্যে আরও বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হবে।’
ভারতের আবহাওয়াবিদরা ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে। তারা বলছে, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ফসল, বিদ্যুতের খুঁটি, মহাসড়ক ও রেল লাইনে পানি ওঠতে পারে।
এদিকে, আজ সকাল থেকেই মান্দবি এলাকার বিচ ও রাস্তাঘাটে মানুষ দেখা যায়নি। শুধুমাত্র কয়েকটি ক্ষুধার্ত কুকুরকে বিচে দেখা যায়। ধূসর আকাশের সঙ্গে সঙ্গে সাগরের ঢেউয়ের উচ্চতা পরিলক্ষিত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শেরি রহমান আজ বলেছেন, ‘দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল থেকে ৬২ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৭৫টি ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে।’
শেরি রহমান আরও বলেন, ‘জেলেদের সাগরে নামা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। ছোট বিমানগুলোকে গ্রাউন্ডে রাখা হয়েছে। দুই কোটি মানুষের শহর করাচিতে বন্যা দেখা যেতে পারে।’
পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ পূর্ভাবাস দিয়ে জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিন্ধু প্রদেশে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে সাড়ে তিন মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।