চাষাবাদ হবে না ইউক্রেনে, খাদ্যসংকটের আশঙ্কা
কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ জমি সেচের জল পাবে না। ফলে চাষাবাদ হবে না। আর চাষাবাদ না হলে ফলবে না ফসল। এতে আফ্রিকা ও ইউরোপের দেশগুলো ফের খাদ্য সংকটে পড়তে পারে।
ইউক্রেনের কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রায় ছয় লাখ হেক্টর জমিতে জল যেত কাখোভকা বাঁধের রিজার্ভার থেকে। বাঁধটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে সমস্ত জল বের হয়ে বন্যা হয়েছে। এবার খরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওই বাঁধ থেকে যে জমিতে জল যেত, সেখানে আর জল পৌঁছাবে না। ফলে ওই জমিগুলো চাষের অযোগ্য হয়ে পড়বে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেখা যাবে বিশ্ব বাজারে। খাদ্যশস্যের দাম বাড়বে। খাদ্যের অভাবও তৈরি হতে পারে। ইউক্রেনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, ওই অঞ্চলের জমিতে চার মিলিয়ন টনের খাদ্যশস্য এবং তেলের বীজ তৈরি হতো। যার বাজারমূল্য সব মিলিয়ে এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এই বাজারটি এবার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।
সমস্যার সূত্রপাত আগেই। পূর্ব ইউরোপের এই অঞ্চলের বেশ অনেকটা অংশ আগেই রাশিয়া দখল করেছিল। গত দেড় বছর ধরে সেখানে লাগাতার যুদ্ধ চলছে। ফলে বহু চাষী জমি ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন। গত বছরেও তারা নিজেদের জমিতে ফসল ফলাতে পারেননি। যুদ্ধের জন্য বহু খেত নষ্ট হয়েছে। তারই মধ্যে মিসাইলের আঘাতে বাঁধটি ভেঙে যায়। এই বাঁধের জল পূর্ব ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ চাষের জমিতে যেমন সেচের জল পৌঁছে দেয়, ঠিক তেমনই ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রাইমিয়া অঞ্চলেও জল পৌঁছে দেয়। বাঁধ ভাঙার ফলে ক্রাইমিয়ার কৃষকেরাও জল পাবেন না।
ভ্যাসাইল নিজের সম্পূর্ণ নাম জানাতে রাজি হননি ডয়চে ভেলের সাংবাদিককে। খেরসনের এই চাষি এখন নিজের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন। কিন্তু তার বাবা-মা এখনো সেখানেই আছেন। ভ্যাসাইল জানিয়েছেন, ২০২২ সালে রাশিয়া আক্রমণ চালানোর কিছুদিনের মধ্যেই তাদের এলাকা রাশিয়ার দখলে চলে যায়। রাশিয়ার সেনা জানিয়ে দেয়, সমস্ত জমি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করা হবে। অত্যাচারের ভয়ে সে সময়েই তারা পালিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধ বাবা-মা-কে নিয়ে আসতে পারেননি। ভ্যাসাইল স্পষ্টই জানিয়েছেন, গ্রামে ফিরে যেতে পারলেও তার বিরাট জমিতে এরপরে চাষ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ, সেচের জল মিলবে না। আর জল ছাড়া ফসল ফলবে না।
গোটা ইউক্রেনের মোট জমির পরিমাণের মাত্র দুই শতাংশ আছে ওই অঞ্চলে। কিন্তু ইউক্রেনের মোট ফসলের ১২ শতাংশ তৈরি হয় সেখানে। খেরসন অঞ্চলের মাটি বেশ উর্বর। সেখানে সবচেয়ে ভালো হয় আনাজপাতি। ওই অঞ্চলের টমেটো বিশ্ববিখ্যাত। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আগামী কিছুদিনের মধ্যে এর প্রভাব বোঝা না-ও যেতে পারে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে প্রভাব পড়তে শুরু করবে। খাদ্যশস্যের দাম তিন শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তার চেয়েও বড় সমস্যা, ইউক্রেন পরিমাণমতো খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে পারবে না। ফলে আফ্রিকা ও ইউরোপের দেশগুলো ফের খাদ্য সংকটে পড়তে পারে। বস্তুত, এর প্রভাব পড়তে পারে কৃষ্ণসাগরীয় চুক্তিতেও। ইউক্রেন ও রাশিয়া তুরস্কের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগরের বাণিজ্যপথ খুলে রাখার চুক্তি করেছে। সেই চুক্তিতেও প্রভাব ফেলতে পারে এই ঘটনা।
কাখোভকা বাঁধে কারা আক্রমণ চালিয়েছিল, তা এখনো স্পষ্ট নয়। দুই দেশই অপরের দিকে আঙুল তুলেছে।