ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অস্ত্র, ইসরায়েলের নিন্দায় জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর মরণঘাতি শক্তি প্রদর্শনের নিন্দা জানিয়েন। তিনি বলেছেন, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের হামলায় শিশুসহ সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত সোমবার দুজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী এই তাণ্ডব চালায়। এই অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনী হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহার করে যার ফলে আরও ৯১ জন লোক আহত হয়।
আজ শুক্রবার (২৩ জুন) ভলকার তুর্ক তার মম্তব্যের সময় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যে, ভারী অস্ত্রের ব্যবহারের কারণে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি ইসরায়েলের প্রতি সহিংসতা থামানোরও আহ্বান জানান।
এক বিবৃতিতে ভলকার তুর্ক বলেন, ‘কড়া রাজনৈতিক বক্তব্য বিনিময়ের রেশ ধরে এই সপ্তাহে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর আধুনিক সামরিক অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের ফলে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে তা যেকোনো সময়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান আরও বলেন, ‘এই অভিযান আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পরিস্থিতির চেয়ে সাধারণ কাজে ব্যাপক মাত্রায় অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সশস্ত্র শত্রুতার বিষয়কে উসকে দিচ্ছে।’
ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তুর্ক মন্তব্য করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের নরকের অতলে নিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলকে জরুরি ভিত্তিতে অবশ্যই পশ্চিম তীরের তৎপরতা সম্পর্কে তাদের নীতিমালা নতুন করে গ্রহণ করতে হবে যা হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাদের অবশ্যই বেঁচে থাকার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।’
জেনিনে ইসরায়েলের হামলার একদিন পরে প্রতিশোধ নিতে রামাল্লাহ ও নাবলুস শহরের মাঝামাঝি এলাকায় একজন ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী গুলি করে চার জন ইসরায়েলিকে হত্যা করে। এর এক ঘণ্টার মধ্যে আবারও ইসরায়েলিরা হামলা চালায় ফিলিস্তিনি কয়েকটি শহরে। হামলায় মারা যায় একজন ফিলিস্তিনি আর পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের বাড়িঘর, যানবাহন।
পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে অতীতে বড় ধরনের আরও বেশ কয়েকবার সামরিক অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে।
২০০২ সালে এক অভিযানে ৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। ওই হামলার পর জেনিন ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ আন্দোলনে প্রতীকী রূপ পায়। এই শিবিরটি ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এই উদ্বেগের প্রকাশ ঘটে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অধিকৃত ভূখণ্ডে সামরিক অভিযানের সম্প্রসারিত রূপের মাধ্যমে যা পরিচালিত হচ্ছে ক্ষমতাসীন চরম-ডানপন্থি সরকারের শাসনামলে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল ফিলিস্তিনের যে ভূখণ্ড দখল করে নেয় পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে, সেখানে অবৈধভাবে সাত লাখেরও বেশি ইসরায়েলি বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এই বসতিগুলো ইসরায়েলের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত নয়।