সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি ১০২ পাকিস্তানি
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরকি-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানকে গত মাসে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরেই বিক্ষোভে নামে ইমরানের সমর্থকরা। গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। হামলা করা হয় সেনাবাহিনীর স্থাপনাতেও।
সেই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ১০২ পাকিস্তানিকে আজ সোমবার (২৬ জুন) সামরিক আদালতে তোলা হয়েছে। একইসঙ্গে বরখাস্ত করা হয়েছে সেনাবাহিনীর তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। দেশটির সামরিক বাহিনীর বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে ফরাসি গণমাধ্যমটি জানায়, দুর্নীতি মামলায় গত ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে গোটা দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হাজার হাজার সমর্থক। একইসঙ্গে বেশ কিছু সমর্থক সেনাবাহিনীর স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
গ্রেপ্তারের তিনদিন বাদেই জামিনে মুক্ত হন পিটিআই প্রধান। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গ্রেপ্তারকে অবৈধ বলে রায় দেয় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। তবে, এরপর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পিটিআইয়ের কয়েক হাজার সমর্থককে। ভয় দেখাতে নিজেদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালায় পাকিস্তানের বর্তমান সরকার। এমনকি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও খর্ব করা হয়।
সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে আজ সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ২০০ টিরও বেশি সেনা স্থাপনায় হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে সামরিক আদালতে ১০২ দুর্বৃত্তের বিচার চলছে।’ রাওয়ালপিন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মুখপাত্র বলেন, ‘এই হামলা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি বিশাল ষড়যন্ত্র ছিল। জনগণকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উসকে দেওয়া হয়েছিল।’
পাকিস্তানের আগামী জাতীয় নির্বাচন অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের আগে বিরোধী রাজনৈতিকদের কর্মীদের দমিয়ে জয়ী হওয়ার জন্য দেশটির বর্তমান সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইমরান খান। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চলমান ধরপাকড় সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে ঠেকানোর একটি প্রচেষ্টা।’
সামরিক আদালতে বেসামরিক লোকদের বিচার নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। পাকিস্তানের বিষয়টির সমালোচনা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘তাদের এই কাজ মানবাধিকার লঙ্ঘনের আওতায় পড়ছে।’
সেনাবাহিনীর তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্তের বিষয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ওই মুখপাত্র বলেন, ‘বরখাস্ত হওয়াদের মধ্যে একজন লে. জেনারেল। অস্থিরতার সময়ে সঠিকভাবে সেনাবাহিনীর সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।’ ওই তিনজন ছাড়াও আরও ১৫ সেনাসদস্যের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘তিনজন মেজর জেনারেল, সাতজন ব্রিগেডিয়ারসহ আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গের জন্য কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’