চীনের কিন্ডারগার্টেনে হামলা, শিশুসহ নিহত ৬
চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়ানডং প্রদেশের একটি কিন্ডারগার্টেনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ছুরি দিয়ে করা এই হামলায় শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। প্রদেশটির লিয়ানজিয়াং শহরে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উ নামের ২৫ বছরের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিন শিশু ছাড়া নিহত বাকি তিনজনের মধ্যে একজন শিক্ষক ও দুজন অভিভাবক।
পুলিশ হামলাকারীর সম্ভাব্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ না দিলেও ঘটনাকে ‘ইচ্ছাকৃত হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। খবর বিবিসির।
আজ সোমবার (১০ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে এই হামলার ঘটনাটি ঘটে। গ্রীষ্মকালীন ক্লাসে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের যখন পৌঁছে দিচ্ছিলেন তখন এই হামলা চালায় যুবকটি। পরে সকাল ৮টার দিকে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের এলাকা সিল করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এক দোকান মালিক বিবিসিকে এই তথ্য দেন। লিয়ানজিয়াং শহরটিতে প্রায় ১০ লাখ ৮৭ হাজার লোক বসবাস করে। ঘটনাটির ভিডিও চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে শোক ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
চীনে সাধারণ মানুষের জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে ছুরি হামলার ঘটনা বাড়ছে। এ ছাড়া একটি হামলায় ক্লাসরুমে ৫০ শিক্ষার্থীর ওপর রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে, দেশটিতে ছুরি হামলার ঘটনাগুলো প্রায় একই ধরনের।
বৃটিশ গণমাধ্যম বিবিসির হিসাবে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশটির স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭টি ছুরি হামলার ঘটনা ঘটেছে। আর এরমধ্যে ১০টি ঘটনাই ঘটেছে ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। গত বছরের আগস্ট মাসে চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জিয়াংশি প্রদেশে অতর্কিত ছুরি হামলায় তিন জন নিহত ও ছয় জন আহত হয়।
দেশটিতে এ ধরনের ছুরি হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত লোকদের বেশিরভাগই ছিল পুরুষ আর তারা সমাজের প্রতি তীব্র ঘৃণা পোষণ করে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানসহ বিশ্বের আরও কিছু দেশেও এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনে ছুরিকাঘাতের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে আরও কিছু অতিরিক্ত কারণও রয়েছে। তাদের মতে কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় চীনে বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর লকডাউনের ঘটনা এর পেছনে অন্যতম কারণ। যদিও করোনা পরবর্তী প্রভাব সম্পর্কে এখনো পরিষ্কার উপলব্ধি তৈরি হয়নি, কিন্তু চাকরিচ্যুতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা ও সম্পর্কের অবনতির কারণে রাগ ও বিরক্তি থেকে এসবের উদ্ভব হতে পারে।
২০২১ সালের ছুরি হামলার পর চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে ভবন থেকে বের হওয়ার মহড়া বাধ্যতামূলক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। কিন্ডাগার্টেনে সোমবারের (আজ) এই ছুরি হামলার পর এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশের অনুমতি দেয়নি।