কম্বোডিয়ায় ‘কার্যকর’ বিরোধী দলহীন নির্বাচনে জয়ের পথে হুন সেন
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ায় সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) ফের বিজয়ী হবে বলে এক প্রকার নিশ্চিত। কারণ, দেশটির প্রধান বিরোধী দলই এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। এই নির্বাচনকে দেশটির ইতিহাসের ন্যূনতম অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে বর্ণনা করেছেন সমালোচকরা।
আজ রোববার (২৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা।
কম্বোডিয়ার স্থানীয় সময় আজ সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা চলে বেলা ৩টা পর্যন্ত। এক কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটার ৯৭ লাখ। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা সিপিপি এবং ১৭টি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে, কয়েক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা হুন সেনকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে এমন কোনো ‘কার্যকর’ জনপ্রিয় দল নেই দেশটিতে। হুন সেনের দল পার্লামেন্টের সবগুলো আসন (১২৫টি) ধরে রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আল-জাজিরা জানিয়েছে, এই নির্বাচনে সিপিপিকে টক্কর দিতে পারতো দেশটির প্রধান বিরোধী দল দ্য ক্যান্ডেল লাইট পার্টি। তবে, গত মে মাসে নিবন্ধন হারায় রাজনৈতিক দলটি। এর ফলে আজকের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি তারা। কম্বোডিয়ার গণতন্ত্রকে চাপে ফেলার জন্য হুন সেন এমনটি করেছেন বলে অভিযোগ সমালোচকদের।
এশিয়া মহাদেশে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন হুন সেন। দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে ক্ষমতাসীন তার দল । আজকের নির্বাচনের জয়ী হয়ে হুন সেন তার ছেলে হুন মানেটকে ক্ষমতায় বসানোর পথ আরও পরিষ্কার করলেন। হুন মানেট কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আল-জাজিরা বলছে, দীর্ঘ সময়ের ক্ষমতাকালে হুন সেন তার রাজনৈতিক বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন। আজকের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধীরা ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করছেন। তাদের দাবি, কৌশল করে নির্বাচন থেকে বিরোধীদের সরিয়ে দিয়েছেন হুন সেন।
এদিকে, নির্বাচনের জেরে আজ বিক্ষোভ করেছে বিরোধী দলের সমর্থকরা। তবে, ব্যালট পেপার ধ্বংসের অভিযোগে অনেক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি অনেক গণমাধ্যমের ওয়েবসাইট ব্লক করে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
কম্বোডিয়ার জাতীয় নির্বাচন কমিটি (এনইসি) জানিয়েছে, বেলা ১১টার মধ্যে ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন বন্ধের চেষ্টার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার কার হয়েছে।
এনইসির মুখপাত্র সোম মরিডা বলেন, ‘গ্রেপ্তার একজন ব্যালটে ক্রস চিহ্ন এঁকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। আরেকজনকে ভোটকেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভোট দিয়ে ব্যালট পেপার নিজের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেন তিনি। বের করার জন্য বার বার বলা হলেও তিনি তা করেননি।’
এই নির্বাচনেও হুন সেনের দল ফের নির্বাচিত হবে বলে আগেই জানিয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ)। তারা বলেছে, একটি অবৈধ প্রক্রিয়ায় ভোট হবে এবং এর ফলাফল অনুমানযোগ্য।
এফআইডিএইচের মতে, আজকের নির্বাচনটি ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রতিচ্ছবি হতে যাচ্ছে। ওই সময় দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টিকে (সিএনআরপি) নিষিদ্ধ করা হয়। এতে করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে হুন সেনের জয়ের পথ সহজ হয়ে যায়।