ফুটন্ত যুগে পৃথিবী, জলবায়ু পরিবর্তনে মূল কাজের ডাক জাতিসংঘের
জুলাই মাসের রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রার কারণে পৃথিবী উষ্ণায়নের ধারা থেকে তাপমাত্রার ফুটন্ত যুগে প্রবেশ করেছে বলে মন্তব্য করেছন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস। একইসঙ্গে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে যতো দ্রুত সম্ভব মূল কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে দাবদাহ বইছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপের কিছু অংশ এবং দুই আমেরিকা মহাদেশ। রেকর্ড ভেঙে বইতে থাকা তাপ প্রবাহের কারণে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গ্রিস, ইতালি ও আলজেরিয়ায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ দাবানল।
নিউইয়র্কে বিষটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অ্যান্টনিও গুতেরেস উত্তর গোলার্ধ জুড়ে বইতে থাকা এই তাপমাত্রাকে ‘নিষ্ঠুর গ্রীষ্ম’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘পুরো গ্রহের জন্যই এটি একটি বিপর্যয়। আমাদের সামনে এখন জলবায়ু পরিবর্তন এসে পড়েছে। এটা ভয়ানক। আর এটা কেবলমাত্র শুরু। উষ্ণায়নের যুগ শেষ হয়ে গেছে। তাপমাত্রার ফুটন্ত যুগে প্রবেশ করেছে পৃথিবী।’ খবর আলজাজিরার।
ইইরোপীয় ইউনিয়নের তহবিলে পরিচালিত কপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের তথ্যউপাত্ত অনুসারে জুলাইয়ের প্রথম তিনটি সপ্তাহ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ছিল উষ্ণ, তাছাড়া জুলাই মাসের পুরোটা যে কোনো সময়ের চাইতে উষ্ণ হওয়ার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত তথ্যউপাত্ত আগামী ৮ আগস্ট প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এর আগের উষ্ণতম জুলাই মাস ছিল ২০১৯ সালের।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে বইছে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেওয়া দাবদাহ। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়তে থাকা এই তাপমাত্রাকে ‘অস্তিত্বের জন্য হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হোয়াইট হাউসে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এখন আর কেউই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়াকে অস্বীকার করতে পারবে না।’
বাইডেন বলেন, তার দেশে আবহাওয়া সম্পর্কিত কারণে যত মানুষ মারা যায় তার মধ্যে বেশি মারা যায় গরমের কারণে। গরমে ছরে ৬০০ লোক মারা যায় দেশটিতে। আর তা থেকে রেহাই পেতে বাইরে খোলা জায়গায় কাজ করা শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তার নিয়মকানুনকে আরো শক্তিশালী করতে যাচ্ছেন তিনি।
অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রচণ্ড গরম সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস ও প্রতিনিয়ত সতর্কতার বিষয়গুলোকে উল্লেখ করে জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস বলেন, ‘সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এই পরিবর্তনের গতি।’
অ্যান্টনিও গুতেরেস এই ‘দুঃখজনক’ পরিস্থিতি মেকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ডাক দেন যার মধ্য রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি ক্ষেত্রে নেওয়া লক্ষ্য। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বাতাস নিঃশ্বাস নেওয়ার অনুপযুক্ত, গরম অসহ্য। আর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে করা লাভ ও জলবায়ুর বিষয়ে কোনো কিছু না করা অগ্রহণযোগ্য।’
অ্যান্টনিও গুতেরেস বলেন, ‘নেতাদের অবশ্যই নেতৃত্ব দিতে হবে। আর কোনো ইতস্ততভাব নয়, কোনো অজুহাত নয়, কোনো কারণ দেখানো নয়, আর কোনো অপেক্ষা নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতেই হবে।’
আগামী সেপ্টেম্বরে জলবায়ু উচ্চাশা সম্মেলনকে সামনে রেখে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস উন্নত দেশগুলোর প্রতি ২০৪০ সালের কাছাকাছি সময়ের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের ডাক দেন আর উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য এই লক্ষ্য ২০৫০ সালের কাছাকাছি পূরণের ডাক দেন।