আগের থেকে ভালো আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, দেখতে গেলেন মমতা
আগের চেয়ে কিছুটা ভালো আছেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে, সংকট এখনও কাটেনি।
শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত শনিবার দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে (উডল্যান্ডস) ভর্তি হন তিনি। ওদিন দুপুরের খাবারের পর বিশ্রাম নেওয়ার সময় অসুস্থতা অনুভব করেন তিনি। এরপরই পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি।
আজ সোমবার (৩১ জুলাই) বিকেলের দিকে ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন থেকে তাঁকে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। এর আগে এদিন সকালে তার ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করা হয়। সেই রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকদের অনুমান, বুদ্ধদেবের ফুসফুসের সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তাঁর জ্বর আসেনি। জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রাও কমেছে।
এদিকে, সোমবার বিকেল ৪টার কিছু পরে সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে যান বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখার পাশাপাশি চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেন মমতা।
পরে মমতা ব্যানার্জি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে, চিকিৎসকরা তাদের সাধ্যমত চিকিৎসা করছেন। তাঁকে দেখতে মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। বুদ্ধদেব বাবু এখন ভালো আছেন, স্থিতিশীল আছেন। তাঁর জ্ঞানও আছে। আমার মনে হলো, উনি আমায় দেখে হাত নাড়লেন। বাদবাকিটা চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন। তবে, আমার দেখে মনে হয়েছে তার শরীরের বিভিন্ন প্যারামিটারগুলো অনেকটাই ভালো।'
এ প্রসঙ্গে মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা সফলভাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন থেকে বের করতে পেরেছি। আমরা সকালবেলা থেকেই তাঁর বিভিন্ন প্যারামিটারগুলো খেয়াল করছিলাম। এখন উনি নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে আছেন। এখানেও বিভিন্ন প্যারামিটার দেখে বোঝা যাচ্ছে যে তাঁর শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারগুলো স্থিতিশীল রয়েছে। আমাদের মেডিকেল বোর্ড নিয়মিতভাবে তাঁর দিকে নজর রেখে চলেছে। এখন পর্যন্ত তাঁর যে শারীরিক অবস্থা তাতে আমরা খুশি।’
অসুস্থতার খবর পেয়ে ইতোমধ্যেই হাসপাতালে গিয়ে সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে আসেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, সিপিআইএম নেতা রবীন দেব, বিজেপির রাজ্য সভাপতি ড. সুকান্ত মজুমদার, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী প্রমুখ।
টানা দুদিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন বুদ্ধদেবের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য এবং মেয়ে সুচেতনা ভট্টাচার্য।
গত প্রায় ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে ‘ক্রনিক অবস্ট্রকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ (সিওপিডি) সমস্যায় ভুগছেন তিনি। অসুস্থতার কারণে ২০১৮ সালে সিপিআইএম পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটি এবং রাজ্য কমিটি থেকে সরে যান। তবে অসুস্থতা সত্ত্বেও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে বামফ্রন্টের সভায় তাকে শেষবার প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল। ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এই সিনিয়র বাম নেতা। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নিয়ে প্রবল অনীহার কারণে বাড়িতেই হোম আইসোলেশনে রেখে তাঁর চিকিৎসা চলে। ২০০০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।