ইতালি উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকাডুবিতে নিহত ৪১
ইতালির উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকাডুবির ঘটনায় ৪১ জন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়ারা ইতালির গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে। আজ বুধবার (৯ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি।
নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া চারজন উদ্ধারকারীদের জানিয়েছেন, নৌকাযোগে তারা তিউনিসিয়ার স্ফ্যাক্স শহর থেকে ইতালির উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। পথিমধ্যে তাদের নৌকাটি ডুবে যায়। বেঁচে যাওয়া ওই চারজন আইভেরি কোস্ট ও গিনির নাগরিক। আজ ইতালির ল্যাম্পেডুসা দ্বীপে পৌঁছায় ওই চারজন।
ইউরোপের দেশ ইতালি যেতে ভূমধ্যসাগর রুট ব্যবহার করে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। চরম ঝুঁকি জেনেও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীরা এই রুটটি ব্যবহার করেন। আইওএমের তথ্য মতে, চলতি বছরে এই ঝুঁকিপূর্ণ রুটটিতে প্রাণ হারিয়েছে এক হাজার ৮০০’র বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী। যা গত বছর ছিল ৯০০’র ঘরে।
বেঁচে যাওয়া ওই চারজনের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। তারা উদ্ধারকারীদের জানিয়েছে, যে নৌকাটি করে তারা রওনা দিয়েছিল সেটিতে তিন শিশুসহ মোট ৪৫ জন ছিল। সাত মিটার বা ২০ ফুট দৈর্ঘ্যর নৌকাটি গত বৃহস্পতিবার স্ফ্যাক্স থেকে ছেড়েছিল। তবে, যাত্রার কয়েক ঘণ্টা বাদেই বিশাল ঢেউয়ে নৌযানটি ডুবে যায়। নৌকাটিতে থাকা মাত্র ১৫ জন জীবন সুরক্ষা জ্যাকেট পেয়েছিল।
ডুবে যাওয়া নৌকাটির অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি কার্গো জাহাজের লোকেরা উদ্ধার করেছিল বলে জানিয়ে বেঁচে যাওয়ারা জানান, ওই জাহাজ থেকে তাদেরকে ইতালির কোস্টগার্ডের নৌযানে হস্তান্তর করা হয়।
ইতালির কোস্টগার্ড জানিয়েছে, গত রোববার ল্যাম্পেডুসা উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দুটি নৌকা ডুবে গেছে। তবে, এই বেঁচে যাওয়ারা কোন নৌকার সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।
তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষ বলছে, ল্যাম্পেডুসা থেকে ৮০ মাইল বা ১৩০ কিলোমিটার দূরের স্ফ্যাক্স একটি বন্দর নগরী। নিরাপদে ইউরোপে প্রবেশের জন্য এই বন্দর শহর থেকে যাত্রা করে বেশির ভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশী।
প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইতালির টহল নৌযান ও দাতব্য সংস্থাগুলো দুই হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে সাগর থেকে উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃতদের ল্যাম্পেডুসায় আনা হয়েছে।
সম্প্রতি মাসগুলোতে তিউনিসিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের সঙ্গে বিদ্বেষমূলক আচরণ করা হচ্ছে। তাদের জোর করে দেশটি থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনটার পর থেকে নৌকাযোগে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারীর সংখ্যা বেড়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, ২০১৪ সালের পর থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে ১৭ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী নিহত বা নিখোঁজ হয়েছে। ভূমধ্যসাগর রুটটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ক্রসিং হয়ে উঠেছে।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুখতে গত মাসে তিউনিসিয়া সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ওই চুক্তি অনুযায়ী, তিউনিসিয়াকে ১১ কোটি আট লাখ মার্কিন ডলার বা ৯ কোটি ইউরো দিবে ইইউ। চোরাচালান বন্ধ, সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ও অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় এই অর্থ ব্যয় করতে হবে তিউনিসিয়াকে।