ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় পানি বৃহস্পতিবার থেকে সাগরে ছাড়বে জাপান
সুনামিতে বিধ্বস্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে ছাড়ার কথা আগে থেকেই জানিয়ে আসছিল জাপান। তবে, কবে থেকে এই পানি ছাড়া হবে তা জানাচ্ছিল না সূর্যোদয়ের দেশটি। প্রতিবেশী দেশগুলো বিরোধিতা সত্ত্বেও অবশেষে প্রশান্ত মহাসাগরে তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়ার তারিখ নির্ধারণ করেছে তারা। আগামী বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) থেকে পর্যায়ক্রমে সাগরে পানি ছাড়বে দেশটি। আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, ফুকুশিমার পানি সাগরে ছাড়ার বিরোধিতা করে আসছে জাপানের প্রতিবেশী চীন। দেশটি থেকে খাদ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে বেইজিং। আর জাপানের আজকের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে তারা। অন্যদিকে, হংকং জাপানি অঞ্চলে থাকা সাগর থেকে ১০ পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
ফুকুশিমার পানি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে আজ জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব জাপান থেকে ফুকুশিমার পানি সাগরে ছাড়া হবে। তবে, এই পানিতে কোনো তেজস্ক্রিয়তা নেই। পানি সম্পূর্ণ নিরাপদ।’
২০১১ সালের মার্চে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় টোকিওর ফুকুশিমা-দাইছি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ওই প্রাকৃতিক দুর্যেঅগে প্রাণ হারান ১৮ হাজার মানুষের। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত চুল্লিকে শীতল রাখার জন্য ওই পানি ব্যবহার করা হয়। হিসেব অনুযায়ী, চুল্লি শীতল করতে ব্যবহৃত হওয়া ১৩ লাখ ৪০ হাজার টন তেজস্ক্রিয় পানি সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা দিয়ে ৫০০টিরও বেশি অলিম্পিক গেমসের সুইমিং পুল ভরে ফেলা সম্ভব।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করা সংস্থা টেপকো বলছে, তেজস্ক্রিয় পানিতে পরিপূর্ণ রয়েছে এক হাজার ইস্পাতের ট্যাংক। স্থানের সংকটে তারা ক্রমান্বয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলতে চায়। সংস্থাটি বলছে, ভূগর্ভস্থে রাখা সমস্ত পানির তেজস্ক্রিয় পদার্থ অপসারণের জন্য ফিল্টার করা হয়েছে। তবে, ট্রিটিয়াম পরিশোধনের ব্যবস্থা করেনি তারা।
যদিও বিষয়টি চীনকে আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আজ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েবিন বরেন, ‘সাগর গোটা মানবজাতির সম্পদ। এটি জাপানের ইচ্ছামত পারমাণবিক দূষিত পানি ফেলার জায়গা নয়।’
গত জুলাইয়ে তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলার অনুমতি দেয় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। ওই সময় সংস্থাটি থেকে বলা হয়, জাপান ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ার যে পরিকল্পনা করেছে, তা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার মানদণ্ড অনুযায়ী করা হয়েছে। এতে মানুষ ও পরিবেশের ওপর তেমন ক্ষতিকর কোনো প্রভাব পড়বে না।