থারমান শানমুগারত্নম : সিঙ্গাপুরের ভিন্ন মাত্রার প্রেসিডেন্ট
সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা থারমান শানমুগারত্নমকে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। তবে, অনেকে এ বিষয়ে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করছেন আর ভাবছেন তারা কেন এ কাজটি করলেন।
গত শুক্রবার এক যুগ সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে সাবেক এই শীর্ষ মন্ত্রী ৭০ দশমিক চার শতাংশ ভোট পেয়ে আরও দুজন প্রার্থীকে খুব সহজেই পরাজিত করেন। খবর বিবিসির।
থারমান সব সময়ের জন্যই একজন অগ্রগামী ব্যক্তিত্ব। মার্জিত, সুভাষী, বুদ্ধিমান হিসেবে সিঙ্গাপুরবাসীর কাছে তিনি পরিচিত, সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক হিসেবেও তিনি সমাদৃত।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অভিপ্রায়েই থারমান কয়েক মাস আগে ক্ষমতাসীন পিপলস অ্যাকশন পার্টি (পিএপি) থেকে পদত্যাগ করেন। আর এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয় সিঙ্গাপুরের জনগণ, কেননা তার ছিল অনেক বড় কিছু করার সম্ভাবনা।
সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট পদটি অনেকটা আনুষ্ঠানিক, কেননা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুবই সীমিত সেখানে। দেশটির সাধারণ কর্মকাণ্ডেও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যে কারণে প্রেসিডেন্ট খোলামেলাভাবে কথাও বলতে পারেন না। দেশটির প্রেসিডেন্টের অবস্থা অনেকটা ব্রিটিশ রাজার মতো।
এই সব কারণে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা ব্যক্তিই সাধারণত সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে, থারমান একজন ব্যতিক্রম ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেশের অর্থমন্ত্রী ও উপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি তার রয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) শীর্ষস্থানীয় পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা।
সিঙ্গাপুরবাসীর অনেকেই মনে করেছিল, পিএপি ছাড়ার কারণে তিনি হয়তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখতে যাচ্ছেন। অনেকে ভেবেছিলেন তিনি হয়তো প্রধানমন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন।
তবে ৬৬ বছর বয়সী থারমানের রয়েছে একজন ভদ্রলোকের ইমেজ। তিনি অন্যান্য রাজনীতিকদের মতো কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করতেন না। আর এটিই হচ্ছে তার ব্যক্তিত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
অনেকে তাকে দেশটির প্রথম অচীনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কল্পনা করেছিলেন। চীনা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর দেশটিতে অচীনা প্রধানমন্ত্রীর বিষয়টি নিয়ে কল্পনা করার ঘটনাই বিরল।
সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট পদে অচীনা ব্যক্তি এসেছেন, তবে জনগণের ভোটে তিনিই প্রথম নির্বাচিত ব্যক্তি যিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। তবে, তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বিই ছিলেন চীনা বংশোদ্ভূত।
যদিও থারমান মনে করতেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ভাল করবেন না। অন্যদিকে পিএপি চাইছিল যেন তিনি প্রেসিডেন্ট হন যাতে আগামীর নেতৃত্ব তার হাত ধরেই বেরিয়ে আসে।