বন্দি নির্যাতন কেন্দ্র পেল বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি
ভবনটি আগে ছিল স্কুল। পরে এটিকে করা হয় বন্দি নির্যাতন কেন্দ্র। ওই ভবনের দেওয়ালের ওপাশ থেকে নিখোঁজ হয়েছে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ। সেখানে প্রবেশ করা অনেককেই আর কোনোদিন দেখা যায়নি। আর এই স্থাপনাকেই বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। খবর আল-জাজিরার।
প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, আর্জেন্টিনার নেভি স্কুল অফ মেকানিক্স (ইএসএমএ) পরিবর্তিত হয়ে একটি বন্দি নির্যাতন কেন্দ্রে পরিণত হয়। এর ভয়াবহ ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য স্থাপনাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়ছে ইউনেসকো।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় ইউনেসকোকে ধন্যবাদ জানিয়ে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ বলেন, ‘দ্য নেভি স্কুল অফ মেকানিক্স রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদের চরম খারাপ দিকগুলো জানিয়েছিল। স্মৃতিগুলোকে অবশ্যই ধরে রাখতে হবে।’ এই ভবনে ভয়ঙ্কর কার্যক্রম চালানো হতো বলেও জানান আর্জেন্টাইন প্রেসিডেন্ট।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, ১৯৭৬ সালে আর্জেন্টিনার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইসাবেল পেরোনকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখলে নেয় দেশটির একটি সামরিক গোষ্ঠী। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল তারা।
সামরিক সরকারের এই সময়ে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছিল। বিরোধী মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে আগ্রাসন চালাতো স্বৈরশাসকেরা। এ সময়ে অন্তত ৩০ হাজার লোক নিখোঁজ হন বলে ধারণা করা হয়। তাদের ভাগ্যে কি হয়েছিল তা এখনও অজানা। সামরিক হেফাজতে নেওয়ার পরই তাদের আর হদিস মিলেনি।
ধারণা করা হয়, ওই সময়ে আর্জেন্টিনাজুড়ে ৩৪০টি ডিটেনশন সেন্টার ছিল। আর ইএসএমএ ছিল প্রথম সারির নির্যাতন কেন্দ্র। রাজধানী বুয়েনস আইরেসে থাকা এই বন্দি নির্যাতন কেন্দ্রটিকে বর্তমানে স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আল-জাজিরা বলছে, ইএসএমএতে একটি প্রসূতি ওয়ার্ড ছিল। গর্ভবতী বন্দিদের সেখানে রাখা হতো। তারা সন্তান জন্ম দিলেই ওইসব নবজাতককে তাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হতো। শিশুদের প্রায়ই স্বৈরশাসকদের সঙ্গে সংযুক্ত পরিবারে দত্তক দেওয়া হতো। সামরিক সরকারের সময় ইএসএমএতে হওয়া ঘটনাগুলো চাপা দেওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিল স্বৈরশাসকেরা।