দেশে ফিরে গ্রেপ্তারের শঙ্কা কাটল নওয়াজ শরীফের
দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে স্বেচ্ছানির্বাসন শেষে দেশে ফেরার আগেই আজ বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) জামিন দিয়েছে দেশটির আদালত। এর ফলে দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তারের যে আশঙ্কা ছিল তা দূর হলো। নওয়াজ শরীফের আইনজীবীরা এই তথ্য দিয়েছেন। খবর এএফপির।
আশা করা হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে চার বছর অবস্থানের পর দেশে এসে নওয়াজ শরীফ আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-এন) হাল ধরবেন।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী শনিবার তার রাজনৈতিক প্রাণকেন্দ্র লাহোরের জনসভায় নওয়াজ শরীফের যোগদানের বিষয়ে আর কোনো বাধা রইল না। যদিও এই সময়ে তার প্রাথমিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ইমরান খান দিন কাটাচ্ছেন কারাগারের অভ্যন্তরে বন্দি অবস্থায়।
এই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে পিএমএলের চেয়ারম্যান রাজা মোহাম্মদ জাফর উল হক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন করে শুরুর মতো, তার ফিরে আসাকে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবেই দেখা হচ্ছে।’
নওয়াজ শরীফের আইনজীবী আমজাদ পারভেজ এএফপিকে জানান, ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তাকে আত্মরক্ষায় ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত জামিন দিয়েছে যা অর্থ পাকিস্তানে আসলেই তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
নওয়াজ শরীফ পাকিস্তানের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ২০১৭ সালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং দুর্নীতির দায়ে দোষী হওয়ায় তাকে আজীবন রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
সাত বছরের সাজার এক বছরেরও কম সময় কারাভোগের পর যুক্তরাজ্যে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি পেয়ে দেশত্যাগ করেছিলেন নওয়াজ। তবে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শাসনামলে বারবার দেশে ফেরার জন্য আদালতের নির্দেশের পরও তিনি দেশে ফেরেননি।
পাকিস্তানের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণে বলা হয়ে থাকে দেশের রাজনীতিবিদরা প্রায়ই আইনের মারপ্যাঁচের শিকার হন, যার নেপথ্যের কুশীলব দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনী।
তবে, নওয়াজ শরীফের ভাগ্য খুলে যায় গতবছর তার ভাই শেহবাজ শরীফ ক্ষমতায় আসার পর। শেহবাজ সরকার জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার মেয়াদ পাঁচ বছরে কমিয়ে আনেন আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষক জাহিদ হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট কিছু আইনি প্রতিবন্ধকতা এড়াতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও মুসলিম লীগের মধ্যে মসৃণ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে চুক্তির আলোকেই নওয়াহ শরীফ দেশে ফিরতে পারছেন।
নওয়াজ শরীফ ১৯৯০ সালে প্রথম ক্ষতায় আসেন। তবে, ১৯৯৩ সালে তিনি দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসেন ১৯৯৭ সালে যার স্থায়ীত্ব চলে ১৯৯৯ সাল নাগাদ। সে সময় তিনি সামরিক অভ্যত্থানে পদচ্যুত হন। নওয়াজ অভিযোগ করে আসছেন নিরাপত্তা বাহিনীর নির্দেশনাতেই তিনি ২০১৭ সালে আবারও ক্ষমতা হারান। এ সময় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট দুর্নীতির অভিযোগে তাকে রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করে। যদিও তিনি বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।