গাজায় ইসরায়েলের হামলায় শিশুমৃত্যু চার হাজার ছাড়িয়েছে
গত এক মাসে ইসরায়েলের বিরামহীন বোমাবর্ষণে গাজায় মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে নয় হাজার ৭৭০ জনে। আর এর মধ্যে কেবল শিশুই মারা গেছে চার হাজার ৮ জন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য দিয়েছে। খবর আলজাজিরার।
গতকাল রোববার (৫ নভেম্বর) বিকেলে গাজা শহরের কেন্দ্রস্থলে বুরেজি শরণার্থী শিবিরের কাছে একটি স্কুলের পাশে ইসরায়েলের বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়। আল আকসা হাসপাতালের কর্মকর্তারা এই তথ্য দিয়েছেন। এই শরণার্থী শিবিরটিতে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার ফিলিস্তিনি। গত বৃহস্পতিবারও এখানে হামলা চালানো হয়েছিল।
এই নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় তিনটি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালালো ইসরায়েলে। এই সময়ে গাজার আল-মাঘাজি ও জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে হামলায় মারা যায় আরও অন্তত ৫০ ফিলিস্তিনি।
আল-মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া আরাফাত আবু মাশাইয়া নামের এক ব্যক্তি জানান, ইসরায়েলি বিমান হামলায় বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিকারের গণহত্যা।’
বাড়িঘরের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে আবু মাশাইয়া বলেন, ‘এখানে থাকা সব মানুষ শান্তিপ্রিয়। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেতে পারি একজন লোকও ওই হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা করেনি।’
এ প্রসঙ্গে ৫৩ বছর বয়সী সাইদ আল-নেজমা জানান, আশপাশে যখন বিস্ফোরণ হচ্ছিল তখন তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন। আল-নেজমা বলেন, ‘সারা রাত আমি ও অন্যান্য লোকজন ধ্বংসস্তুপ থেকে মানুষের মরদেহ বের করার কাজ করেছি। আমরা এর মধ্যে পেয়েছি শিশুর ছিন্নভিন্ন মরদেহ।’
এদিকে রোববার বিমান থেকে বোমাবর্ষণে চার ঘণ্টার একটি বিরতি দিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার অধিবাসীদের আবারও দক্ষিণে সরে যেতে বলে। এর পরপর গাজা উপত্যকার উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত হাইওয়তে মানুষের ঢল নামে। লোকজন পায়ে হেঁটে বা গাধার গাড়িতে করে যার হাতে যা পেরেছে তাই নিয়ে ছুঁটতে শুরু করে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে।
এ সময় এক ব্যক্তি জানান, তিনি প্রায় আধা কিলোমিটার পথ হাত ওপরে তুলে হেঁটে এসেছেন ইসরায়েলি সৈন্যদের নির্দেশে। আরেকজন জানালেন তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত গাড়িগুলোতে মানুষের মৃতদেহ দেখেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফিলিস্তিনি বলেন, ‘শিশুরা এই প্রথম ট্যাঙ্ক দেখতে পেল। বিশ্ববাসী আমাদের দয়া করুক।’
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীর মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ।
এদিকে, গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরেও ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও হামলা বন্ধের ধারণা বাতিল করে দিয়েছেন। সারা বিশ্বজুড়ে অব্যাহত প্রতিবাদ ও আবেদনের বিষয়গুলোকে অবজ্ঞা করেই তিনি এই ঘোষণা দেন।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত কোনো অস্ত্র বিরতিতেই যাব না আমরা। যতক্ষণ না আমরা তাদের পরাজিত করতে পারছি, আমাদের আক্রমণ চলবেই।’