বাংলাদেশের অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের উদ্বেগ
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা শেষ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (এইচআরসি)। সেই পর্যালোচনার পর দেশের অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এইচআরসি, যা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ন্যায্য মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের ওপর দমন–পীড়ন চালানো হয়েছে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক কর্মীদের আন্দোলনেও চলছে দমন–পীড়ন। এ ছাড়া সাংবাদিক, মানবাধিকার রক্ষাকারী ও সুশীল সমাজের নেতাদের হয়রানি করা হচ্ছে। স্বাধীনতা সংকুচিত করে এমন আইন সংস্কারের ব্যর্থতা উদ্বেগের বিষয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘২০২৪ সালের প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি, বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তার, হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে আটক ও কর্তৃপক্ষের অত্যধিক শক্তি প্রয়োগে আমরা উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া বিক্ষোভ ব্যাহত করতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া এবং হয়রানি, ভয় দেখানো ও বেআইনি আটকের অভিযোগে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে গণমাধ্যমের ওপর হামলা, নজরদারি, ভয় দেখানো ও বিচারিক হয়রানির কারণে গণমাধ্যমে ব্যাপক সেলফ-সেন্সরশিপ হয়েছে।
সাংবাদিক, মানবাধিকার রক্ষাকারী ও সুশীল সমাজের নেতাদের হয়রানি করতে বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘের বিষেশজ্ঞরা। এর মাধ্যমে মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সাংবাদিক হয়রানির উদাহরণ টেনে বিষেশজ্ঞরা অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তারা বলেছেন, রোজিনার বিরুদ্ধে জোরালো সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি কৌঁসুলিরা। দীর্ঘ দুই বছর তদন্ত পরিচালনা, শুনানি ও দেশের বাইরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় তার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ও নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে এইচআরসির ওই বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বরে অধিকারের সম্পাদক ও পরিচালককে জাল তথ্য প্রকাশ করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং এ জন্য তাদের কারাবরণ করতে হয়েছিল। ২০১৩ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অতিরিক্ত বল প্রয়োগের নথি প্রকাশ করেছিল তারা, যা বাংলাদেশ সরকার কখনও তদন্ত করেনি। গত বছর এর নিবন্ধন নবায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছিল মানবাধিকার সংগঠনটি।
বিষেশজ্ঞরা বলেছেন, ‘ইউনূসের মতো বিশিষ্ট নাগরিক ও আদিলুর রহমান খান বা নাসিরুদ্দিন এলানের মতো মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তখন এটি সমস্ত সাংবাদিক এবং মানবাধিকার রক্ষাকারীদের কাছে একটি বার্তা পাঠায়। সেটি হলো, ভিন্নমত বা সমালোচনার কারণে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে সে যেই হোক না কেন।’