সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারে যার প্রচার কাঠামো সবচেয়ে বেশি কার্যকর ছিল, সেই সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার গতকাল বুধবার (২৯ নভেম্বর) ১০০ বছর বয়সে মারা গেছেন।
এক বিবৃতিতে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কনসাল্টিং ফার্ম কিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটস যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার ভোরে জানায়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানীত, বিদ্বান ও রাষ্ট্রনায়ক ড. হেনরি কিসিঞ্জার আজ তার কানেকটিকাটের বাড়িতে মারা গেছেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কিসিঞ্জারের পরিবার নিউইয়র্কে একটি পারিবারিক শেষকৃত্যের আয়োজন করবে। পরবর্তীতে এর সময় জানিয়ে দেওয়া হবে। খবর এএফপির।
বিবৃতিতে অবশ্য কিসিঞ্জারের মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি। শতবর্ষী হলেও হেনরি কিসিঞ্জার ছিলেন খুবই কর্মঠ এবং গত জুলাই মাসে তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে চীন সফরে গিয়েছিলেন।
চীন ছিল সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জারের পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সহায়ক ক্ষেত্র। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে কিসিঞ্জার গোপনে চীন সফর করেন, যার ফলে ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ঐতিহাসিক সফরের মাধ্যমে বিশ্ব ব্যবস্থায় সূচিত হয় এক নতুন মাত্রা। প্রতিষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মৈত্রীর বন্ধন।
তবে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কারণে নিক্সন ক্ষমতা হারালেও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রয়ে যান তিনি। হেনরি কিসিঞ্জর হলেন যুক্তরাষ্ট্রের এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি একাধারে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া ভিয়েতনাম যুদ্ধ থামাতে তার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন হেনরি কিসিঞ্জার।
হেনরি কিসিঞ্জারের বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের ফলাফলকে সম্মান করতেন তার সমালোচকরাও। তবে ক্ষমতায় থাকতে নিজের স্বার্থে জাতিস্বত্তার শীতল হিসাবনিকাশ সম্পর্কিত তার দর্শন যা ‘ফিলোসফি অব রিয়েলপলিটিক’ হিসেবে সুপরিচিত, তা নিয়ে সমালোচকরা ছিলেন সোচ্চার।
প্রকাশিত গোয়েন্দা তথ্যউপাত্তে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী তৎপরতার অংশ হিসেবে ১৯৭৩ সালে চিলির নির্বাচিত মার্কসবাদী শাসক সালভাদর আলেন্দেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কিসিঞ্জারের সমর্থন ছিল জেনারেল অগাস্টো পিনোশের প্রতি।
এ ছাড়া কিসিঞ্জার সমর্থন অব্যাহত রেখেছিলেন কমিউনিস্টবিরোধী মিত্র ইন্দোনেশিয়ার প্রতিও, যখন দেশটি পূর্ব তিমুর দখল করে নেয় ১৯৭৫ সালে। তবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের চালানো গণহত্যায় তার অন্ধ সমর্থন, সেই সময়ে চীনের চেয়ে ইসলামাবাদের প্রতি সম্পর্ক রক্ষায় তার নীতির গুরুত্ব উঠে আসে।