পশ্চিম তীরে হামাসের প্রতি ফিলিস্তিনিদের সমর্থন বাড়ছে
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী একের পর এক অভিযান চালায় পশ্চিম তীরে। থেকে থেকে জোরদার হয় অভিযানের মাত্রা। ইসরায়েলে হামাসের সর্বশেষ হামলার আগে উত্তরাঞ্চলীয় শহর জেনিনকে কেন্দ্র করে এ অভিযান চলত। তবে, এখন তা সাপ্তাহিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
জেনিন শরণার্থী শিবিরের বাইরে বন্ধ রাস্তাগুলোতে দেখা যায় সামরিক বাহিনীর জিপ গাড়ি ও সশস্ত্র বুলডোজারগুলোকে। পুরো শহরজুড়ে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।
গত মঙ্গলবারও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ছয়জন নিহত হয়। এদের মধ্যে চার জন মারা যায় ড্রোন হামলায়। খবর বিবিসির।
ইসরায়েল অবশ্য বলছে, পশ্চিম তীরে তাদের এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সদস্যদের লক্ষ্য করে, যাদের হাত ইসরায়েলি নাগরিক হত্যার রক্তে রঞ্জিত।
তবে জেনিন হাসপাতালের পরিচালক উইসাম বাকের জানান, ১৩ বছরের গুরুতর অসুস্থ একটি শিশুকে চিকিৎসা সুবিধা নিতে বাধা দেওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘সর্বশক্তি দিয়ে জেনিনের অভ্যন্তরে প্রবেশের চেষ্টা এবং বেছে বেছে যুবকদের হত্যা করার ঘটনায় লোকজন আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। কেননা প্রতিদিন আমরা আমাদের বন্ধুদের একে একে হারাচ্ছি।’
বাকের বলেন, ‘এসব ঘটনা ইসরায়েলের জন্য শান্তি বয়ে আনবে না। এর ফলে প্রতিরোধ দিনের পর দিন আরও জোরালো হবে।’
গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে হামাসের বন্দুকধারীরা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ লোককে হত্যা করে এবং আরও ২৪০ জনকে অপহরণ করে। এরপর ইসরায়েলের পাল্টা হামায় ১৮ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
এরপর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় ৬৯ জন শিশুসহ ২৭১ জন ফিলিস্তিনি মারা যায়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এদের প্রায় সবাই ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর হামলায় মারা যায়।
হামাসের হামলার পর পশ্চিম তীরে, বিশেষ করে নাবলুস ও জেনিনে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। পশ্চিম তীরের ক্ষমতাসীন দল ফাতাহ’র একজন যুবনেতা ও রাজনৈতিক গবেষক রায়েদ দেবাই বলেন, ‘লোকজনের মুখের ভাষায়, গাড়িতে চালানো গান কিংবা ফেসবুক বা সামজিক যোগাযোগমাধ্যম বা আমার ছাত্রদের বিতর্কে সব ক্ষেত্রেই আমি তাদের পক্ষের শক্তিকে দেখতে পাই।’
রায়েদ দেবাই বলেন, ‘ইসরায়েলিদের আক্রমণ ফিলিস্তিনিদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করছে। লোকজন বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম এখন আগের তুলনায় হামাসের পক্ষে আরও বেশি করে সমর্থন দিচ্ছে। গত ৩০ বছরে নতুন প্রজন্মের সামনে কোনো আদর্শ ছিল না, কোনো শ্রদ্ধার পাত্র ছিল না। তবে এখন তারা অন্যরকম কিছু দেখছে, একটি নতুন গল্প তৈরি হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে পশ্চিত তীরের রাজনৈতিক গবেষক আমজাদ বাস্কার বলেন, ‘আগে ফিলিস্তিনি যুবকদের মধ্যে একটি বাড়ির মালিক হওয়া বা পড়াশোনা করে ডিগ্রি নেওয়ার বিষয়ে অগ্রাধিকার ছিল। তবে ৭ অক্টোবরের পর এই অগ্রাধিকারগুলো আমূল বদলে গেছে। এখন তাদের মধ্যে জোরালো হচ্ছে প্রতিরোধের মাধ্যমে জন্মভূমির মুক্তির দাবি। তা শান্তিপূর্ণ উপায়ে বা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে যেকোনো উপায়েই হোক না কেন।’
ড. বাস্কার বলেন, ‘পরিবর্তন এসে গেছে। ফাতাহ ও হামাস এখন মনে করছে, তারা একে অন্যের পরিপূরক। আর আমরা এই দুই আন্দোলনের সত্যিকার সংমিশ্রণ সামনে দেখতে পাব।’