গাজায় ফিলিস্তিনি নির্মূলের আশঙ্কায় চাপে বাইডেন প্রশাসন
ফিলিস্তিনিদের গাজা উপত্যকা থেকে উচ্ছেদ করার ধারণায় সমর্থন দিচ্ছে ইসরায়েল সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে, এতে চাপে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন। কারণ, দেশটির অধিকার কর্মীরা এ নিয়ে বেশ সজাগ। ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে বাইডেন প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে অধিকারকর্মীরা। খবর আল-জাজিরার।
প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের উপকূলীয় ছিটমহলগুলোতে আনুমানিক ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করে। তাদের সেখান থেকে চলে যেতে উৎসাহিত করার কথা গত সপ্তাহে জানিয়েছেন ইসরায়েলের ডানপন্থি সরকারের মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির ও বেজালেল স্মোটরিচ।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকাসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য ভূখণ্ডে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইসরায়েলের অভিযানের পর থেকে গাজায় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে আনুমানিক ১৯ লাখ ফিলিস্তিনি।
গত রোববার ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছায় অভিবাসনের আহ্বান জানিয়েছেন স্মোটরিচ। ওইদিন তিনি বলেছিলেন, ‘যুদ্ধ যেদিন বন্ধ হবে সেদিন গাজায় ২০ লাখ না থেকে এক থেকে দুই লাখ আরব থাকলে সিদ্ধান্ত অন্যরকম হবে।’ এর একদিন পরেই অর্থাৎ, গত সোমবার নিরাপত্তামন্ত্রী বেন-গাভির একই ধরনের মন্তব্য করেন। তার উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরায়েলের গণমাধ্যমগুলো জানায়, বেন-গাভির বলেন, ‘এটি একটি সঠিক, ন্যায্য, নৈতিক এবং মানবিক সমাধান।’
ইসরায়েলের দুই মন্ত্রীর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট হয়, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনিদের গাজা উপত্যকা থেকে বের করতে মরিয়া। এরপরেই মানবাধিকার ও আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি একটি যুদ্ধাপরাধ। এটি জাতিগত নির্মূলের দিকে পরিচালিত হতে পারে। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন সংগঠক রাশা মুবারক বলেন, ‘আপনি যখন বাড়িঘরে বোমা হামলা করছেন এবং পুরো জনসংখ্যাকে অনাহারে ফেলছেন তখন এটি সত্যিই স্বেচ্ছাসেবী নয়।’
মুবারক আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে বের করে আনার পরিকল্পনায় ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের নিন্দা করতে ব্যর্থ হয়েছে বাইডেন প্রশাসন। বরং, তারা ইসরায়েলকে অব্যাহত সামরিক সহায়তা এবং কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চলা গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলে বাইডেন প্রশাসন বিরাট ভূমিকা রাখছে।’
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল গাজায় বোমা হামলা বাড়িয়েছে। ফিলিস্তিনিদের সরে যেতেও বলছে তারা। তবে, এর বিপরীতে কথা বলছে জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তারা। তারা ছিটমহল থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে বের করে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে সমর্থন না করার কথা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক মুখপাত্র আল-জাজিরাকে বলেন, ‘গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বা স্থায়ী বাস্তুচ্যুতির বিরুদ্ধে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।’ তবে, ইসরায়েলি মন্ত্রীদের বক্তব্যের বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতি স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘বেন-গাভির ও স্মোটরিচের মন্তব্যকে সমর্থন করে না ওয়াশিংটন।’ তিনি বলেন, ‘তাদের বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন। আমরা বারবার ইসরায়েলি সরকার ও তাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, এই ধরনের বিবৃতি ইসরায়েল সরকারের নীতিকে প্রতিফলিত করে না। তাদের অবিলম্বে এসব বন্ধ করা উচিত।’
অধিকার কর্মীরা বলছেন, ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অটল সমর্থন রয়েছে। যুদ্ধে গাজায় ২২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও নৃশংসতার দরজা খুলে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।