ইকুয়েডরে সংঘবদ্ধ দস্যুদের ‘নিষ্ক্রিয়’ করার নির্দেশ প্রেসিডেন্টের
সরাসরি সম্প্রচারের সময় একটি টেলিভিশন স্টুডিওতে গোলাগুলির ঘটনার পর সংঘবদ্ধ দস্যুদের একের পর এক মানুষ মেরে ফেলার হুমকির মুখে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া দেশটির অপরাধী দলগুলোকে ‘নিষ্ক্রিয়’ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত রোববার দেশটির কারাগার থেকে এক ক্ষমতাশালী মাদক সম্রাটের পালিয়ে যাবার পর প্রেসিডেন্ট নোবোয়া বলেন, তার দেশ ‘অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাতে’ জড়িয়ে পড়েছে। তিনি নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে সশস্ত্র দস্যুদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ করার ঘোষণা দেন। খবর এএফপির।
দীর্ঘদিনের শান্তিপূর্ণ এই দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘাত দানা বেঁধে উঠেছে। দুপাশ থেকে কলম্বিয়া ও পেরুর মাদক ব্যবসা ও কোকেন পাচারের চাপে পড়ে মাদকসম্রাটদের আধিপত্যের সংঘাতে জর্জরিত দেশটির জনপদ। আর এই পরিস্থিতিতে ৩৬ বছর বয়সী নোবোয়া গত বছর ক্ষমতায় আসেন মাদক সংক্রান্ত অপরাধ ও সংঘাতের বিরুদ্ধে লড়াইয় চালিয়ে যাবার ঘোষণার মধ্য দিয়ে।
কারাগার থেকে ইকুয়েডরের সবচেয়ে বড় লস কোনেরোস দস্যুদলের প্রধান জোসে অ্যাডলফো মাসিয়াস পালিয়ে যাবার পর প্রেসিডেন্ট নোবোয়া দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন। পাশাপাশি আরোপ করা হয় রাত্রিকালীন কারফিউ।
এরপরই মঙ্গলবার সংঘবদ্ধ দস্যুদের সঙ্গে শুরু হয় সংঘাত। এ সময় তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের জিম্মি করে, বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণ ঘটায় আর মঙ্গলবার বন্দরশহর গোয়াকুইলে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে তাণ্ডব চালায়। চ্যানেলটির সম্প্রচার চলার সময় বন্দুকধারীরা মুখোশ পড়ে গুলি চালায়। এ সময় একজন নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘দয়া করে গুলি করবেন না।’ হামলাকারীরা টিভি সেটের লোকজনকে মাটিতে শুয়ে পড়তে বলে। এই ঘটনার প্রায় ৩০ মিনিট পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
এই ঘটনার পরপর প্রেসিডেন্ট নোবোয়া সামরিক অভিযান শুরু করার নির্দেশ দেন। এরপর চালানো অভিযানের সময় বেশ কিছু বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়, বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। সংঘর্ষের পর সাত পুলিশ সদস্যকে অপহরণ করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩ জন দস্যুকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, অপহৃত পুলিশ সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে অস্ত্রের মুখে একটি বিবৃতি পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে প্রেসিডেন্ট নোবোয়ার উদ্দেশে বলা হয়, ‘আপনি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, আপনারে বিরুদ্ধে যুদ্ধ হবে। আপনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। আর আমরা এই যুদ্ধে পুলিশ, সাধারণ মানুষ আর সৈন্যদের যুদ্ধের শিকারে পরিণত করব।’
এদিকে দেশজুড়ে এই পরিস্থিতিতে রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন দ্রুত বাড়িঘরে ফিরে যায়। এছাড়া শুক্রবার নাগাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ৩৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত অ্যাডলফো মাসিয়াস বা ফিতো নামে পরিচিত ওই মাদক সম্রাটকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। সংঘবদ্ধ সন্ত্রাস, মাদক পাচার ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী ফিতো। এছাড়া কোলন পিকো নামের আরেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীও জেল থেকে পালিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইকুয়েডরের অ্যাটর্নি জেনারেলকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
২০২১ সালের পর থেকে দেশটির কারাগারে বন্দিদের মধ্যে সংঘর্ষে ৪৬০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ইকুয়েডরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সাত হাজার ৮০০টি।