বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই মানবাধিকারে অগ্রাধিকার দিতে হবে : জাতিসংঘ
‘টানা চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়া বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই মানবাধিকারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশে দমনমূলক প্রবণতা পরিহার করতে হবে এবং অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির দিকে ঝুঁকতে হবে। এজন্য বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন।’ জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বুধবার (২৪ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা তুলে ধরেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘ভোটের আগে কয়েক মাস ধরে হাজার হাজার বিরোধী সমর্থককে নির্বিচারে আটক করা বা ভয় দেখানো, সুশীল সমাজ, মানবাধিকারকর্মীদের ওপর হামলা ও হয়রানির খবরে আমরা উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনা সাম্প্রতিক নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘নির্বাচনের আগে প্রায় ২৫ হাজার বিরোধী সমর্থককে আটক করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলপ্রয়োগ করেছে এবং সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অথচ, এসব সহিংসতার কোনো স্বাধীন তদন্ত হয়নি।’
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ‘দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আস্থার অভাবে নির্বাচন বয়কট করেছে। ভোটারদের সরকারি দলের সদস্যকে ভোট দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। এমনকি, ভোট না দিলে নানা ধরনের সহিংস আচরণ এবং সামাজিক সুরক্ষার সুবিধাগুলো হারানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য বিষয়ে স্বাধীনভাবে তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছি। বাংলাদেশে বিপজ্জনকভাবে মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের অবনতির জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এর ফলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, যা সামিাজিক ও আর্থিক উন্নয়নকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা সরকারের নতুন কর্মসূচিতে মানবাধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে সংস্কার কাজের আহ্বান জানাই। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে মৌলিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণমূলক কাজের চর্চা নিশ্চিত করতে পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানাই। এ ধরনের কাজ বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ গোটা বিশ্বে এই বার্তা বহন করতে পারে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষজ্ঞরা সরকারের প্রতি আটক সুশীল সমাজের নাগরিক ও বিরোধী রাজনীতিকদের অতি দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে জরুরিভাবে সংস্কারকাজের ওপরও জোর দেন তারা। এ ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বৈচিত্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সাংবাদিকদের হুমকি, শারীরিক ও অনলাইন সন্ত্রাস, বিচারিক হয়রানি বন্ধসহ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় জড়িতদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ‘আমরা মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন ও পরামর্শ দিতে প্রস্তুত রয়েছি।’