উত্তরাখণ্ডে লিভ ইন রিলেশনেও লাগবে প্রশাসনের অনুমতি, বিল পেশ
ভারতের উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি আইনে কঠিন কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে লিভ ইন রিলেশন বিল পেশ করা হয়েছে। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত বিল পেশ করা হয়েছে। আর সেখানেই বিয়ে ও লিভ ইন সম্পর্ক বাধ্যতামূলকভাবে নথিভুক্ত করার কথা বলা হয়। লিভ ইন রিলেশনশিপের ক্ষেত্রে বিলে বলা হয়েছে, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ লিভ ইন রিলেশনশিপে থাকতে পারবেন না। দরকার হলে পুলিশের তদন্তও হবে। নথিভুক্ত না করে লিভ ইনে থাকলে বা বিয়ে নথিভুক্ত না করলে ছয় মাসের জেল, ২৫ হাজার টাকার জরিমানা বা দুটোই হতে পারে।
লিভ ইন রিলেশন নথিভুক্ত করার জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হবে। সেখানে লিভ ইনের জন্য আবেদন করতে হবে। সেই আবেদন যাচাই করে দেখা হবে। ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার একটা তদন্ত করে দেখবেন। এই তদন্তের বিষয় হবে ওই সম্পর্ক বৈধ কিনা তা দেখা। নথিভুক্ত করার সময় বা পরে তা ছিন্ন করার সময় রেজিস্ট্রার চাইলে পুলিশি তদন্ত করাতে পারবেন।
যদি রেজিস্ট্রারের মনে হয়, ওই সম্পর্ক সরকারি নীতি ও নৈতিকতার বিরোধী, তাহলে তিনি লিভ ইনের অনুমতি না-ও দিতে পারেন। একজন পার্টনার বিবাহিত থাকলে, একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে, জালিয়াতি, জবরদস্তি, পরিচয় গোপন করে লিভ ইন করতে গেলে রেজিস্ট্রার তার অনুমতি দেবেন না। তবে এই ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রারকে তার কারণ উল্লেখ করতে হবে। উত্তরাখণ্ডের মানুষ রাজ্যের বাইরে গিয়ে লিভ ইন করতে চাইলেও তাদের সম্পর্ক উত্তরাখণ্ডে নথিভুক্ত করতে হবে।
লিভ ইন থেকে বেরিয়ে আসতে গেলেও লাগবে রেজিস্ট্রারের অনুমতি। তখন কারণ অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন রেজিস্ট্রার। দরকারে বাবা-মা বা অন্য কোনোও সংশ্লিষ্ট মানুষকে তিনি ডেকে পাঠাতে পারবেন।
এ ছাড়া লিভ ইন সম্পর্ক নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে এক মাস বা তার বেশি দেরি হলে তিন মাসের জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা দুটোই হতে পারে। লিভ ইনের ফলে সন্তানের জন্ম হলে, সেই সন্তান পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে। সেই সন্তানকে কোনোভাবেই বেআইনি বলা যাবে না। যদি কোনো নারীকে তার পুরুষ সঙ্গী ছেড়ে চলে যান, তবে তিনি খোরপোষের অধিকারী হবেন।
নতুন এই আইনের বিরোধিতা করে সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘লিভ ইন তো করাই হয়, একজন ছেলে ও মেয়ে বিয়ের সম্পর্কে যাবে কি না, তা কিছুদিন একসঙ্গে থেকে যাচাই করার জন্য অথবা বিয়ের দায়িত্ব ও জটিলতার বাইরে থাকার জন্য। কিন্তু উত্তরাখণ্ডে যে আইন করা হচ্ছে, তাতে তো লিভ ইন আর বিয়ের মধ্যে কোনো ফারাক থাকবে না। আর পুরো বিষয়টাই সরকারি অনুমোদনের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে।’
ভারতে একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত জীবনধারণের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সরকার কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে কি না, তা নিয়ে অতীতে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের অভিন্ন দেওয়ানি আইন সেই বিতর্ককে আবার উসকে দিতে পারে বলে মনে করছেন জয়ন্ত।