পাকিস্তানে আসতে পারে এক মেয়াদে দুই প্রধানমন্ত্রী!
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে গিয়ে তিন ও দুই বছরের জন্য প্রত্যেক দল থেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে। দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে জিও নিউজ জানায়, ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর কেন্দ্র ও প্রদেশে জোট সরকার গঠনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত রোববার উভয় দল তাদের প্রথম বৈঠকে অর্ধেক মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ধারণা নিয়ে আলোচনা করে।
২০১৩ সালে বেলুচিস্তানে একইভাবে ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমে পিএমএল-এন ও ন্যাশনাল পার্টি (এনপি) থেকে দুই মুখ্যমন্ত্রী মিলে সমান সময় দায়িত্ব পালন করে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন।
লাহোরে পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টুর বাসভবনে রোববারের বৈঠকে উভয় দলই সাধারণ নির্বাচনের পরবর্তী এ সময়ে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সহযোগিতা করতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
বৈঠকে পিপিপির পার্লামেন্টারিয়ান প্রেসিডেন্ট ও কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারি, পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এবং পিএমএল-এনের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর জারি করা এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জাতির স্বার্থ ও কল্যাণকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন নেতারা।
উভয় দলের নেতারা বিরাজমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং দেশের উন্নয়নের জন্য সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার চালিয়ে যাওয়ার অপরিহার্যতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।
পিএমএল-এনের প্রতিনিধিদলে ছিলেন আজম নাজির তারার, আয়াজ সাদিক, আহসান ইকবাল, রানা তানভীর, খাজা সাদ রফিক, মালিক আহমেদ খান, মরিয়ম আওরঙ্গজেব ও শেজা ফাতিমা।
যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের সামগ্রিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন, ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আলোচনা এবং স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির লক্ষ্যে সুপারিশ বিনিময়।
উভয় দলই পাকিস্তানকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে দূরে সরিয়ে সমৃদ্ধি ও স্থিতিস্থাপকতার পথের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দুটি দলকে ম্যান্ডেট দিয়েছে এবং আমরা জনগণকে হতাশ করব না। দুই দলের নেতারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাদের অটল অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন।
বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুসারে, পিএমএল-এন আনুষ্ঠানিকভাবে পিপিপিকে জোট সরকার গঠনে মিত্র হওয়ার প্রস্তাব দেয়। পিএমএল-এনের নেতারা প্রথমে দাবি করেছিল, তারা প্রধানমন্ত্রীর পদ ধরে রাখবে। অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ জারদারির নেতৃত্বাধীন পিপিপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি (সিইসি) ইতোমধ্যে বিলাওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনীত করেছে।
এরপরে দুই দলের নেতারা পাঁচ বছরের মেয়াদের অর্ধেকের জন্য নিজেদের দল থেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেন বলে জানায় সূত্র। প্রধান দলগুলো কেন্দ্র, পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানে জোট সরকার গঠনে সম্মত হয়েছে বলেও জানায় সূত্র।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে উভয় দলের নেতারা ২০০৬ সালে স্বাক্ষরিত গণতন্ত্রের সনদ অনুযায়ী পাঁচ বছরের রোডম্যাপ তৈরির প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছে। দেশটির নির্বাচনের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব পেশ করবে পিপিপি।
এর আগে পিএমএল-এন ও এমকিউএম-পি নেতারা ভবিষ্যত সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্য হয়। বৈঠকে পিএমএলএনের প্রধান নওয়াজ শরিফ ও এমকিউএম-পির নেতা ডা. খালিদ মকবুল সিদ্দিকী উভয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।