ইরানের হামলার জবাবের বিষয়ে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার বৈঠক
ইরানের নজিরবিহীন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়া ঠিক করতে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা বৈঠক করেছে। এ বিষয়ে দেশটি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে কিনা তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলো ইরানের আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছে, তবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
যদিও ইরান ইঙ্গিত দিয়েছে তারা আক্রমণের বিষয়টি বন্ধ করে দিয়েছে, তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ বলেছেন, হামলার জবাব না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে না।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলোতে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে এতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ইউএভি নিক্ষেপের জবাব দেওয়া হবে।’ তবে তিনি তাদের সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা ও সময়সীমা সম্পর্কে কিছু বলেননি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল হালেভি ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় নেভাটিম বিমান ঘাঁটি থেকে কথাগুলো বলছিলেন। এই সামরিক স্থাপনাটি শনিবারের (১৩ এপ্রিল) রাতভর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, এটিতে এখনও কার্যক্রম চালু রয়েছে।
তেহরান বলেছে, এই অভিযানটি ১ এপ্রিল সিরিয়ায় তাদের দূতাবাসে হামলার প্রতিশোধ ছিল। ওই হামলায় ইরানের দুজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার নিহত হয়।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলে ৩০০টিরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশের সহায়তায় সেগুলো নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি এবং ক্ষয়ক্ষতিও সীমিত।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বড় আকার ধারণ করা নিয়ে উদ্বেগের মাঝে বিশ্ব নেতারা সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের হামলার পর নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের লৌহকাঠিন প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, রোববার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে বলেছে, তারা ইরানের বিরুদ্ধে কোনো পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দেবে না।
বাইডেন সোমবার বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনা যায় এবং আগে থেকেই ছড়িয়ে পড়া সংঘাতকে রোধ করা যায়।’
গত ৭ অক্টোবর হামাস হামলা করে প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে। এখনও তাদের হাতে ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে এবং ৩৪ জিম্মির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের। ইসরায়েল গাজায় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে, যা এখনও চলছে। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণে এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৫৪৫ জনের বেশি নিহত এবং ৭৬ হাজার ৯৪ জনের বেশি আহত হয়েছে।
সোমবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা নিয়ে এক ভাষণে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। নেতানিয়াহুর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে এবং কীভাবে ‘আরও উত্তেজনা’ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে সোমবার ইসরায়েলি কিশোর বেঞ্জামিন আচিমি নিহত হওয়ার পর অধিকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি রামাল্লার কাছের একটি বসতি ফাঁড়ি থেকে ভেড়ার পাল চড়াতে গিয়েছিলেন। এরপর গত শুক্রবার থেকে তিনি নিখোঁজ হন। পরে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী তার মরদেহ উদ্ধার করে। ইসরায়েল সরকার বলেছে, তিনি একটি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের প্রতিশোধমূলক সহিংসতার নিন্দা করেছে। তারা দুই তরুণ ফিলিস্তিনি জিহাদ আবু আলিয়া ও ওমর আহমাদ আবদুলগানি হামেদকে হত্যা করেছে। সোমবার ইসরায়েল বলেছে, তারা নাবলুস শহরের কাছে আরও দুই ফিলিস্তিনিকে হত্যার তদন্ত করবে, যারা আপাতদৃষ্টিতে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে নিহত হয়েছে।