হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ : শীর্ষ মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ
গাজায় চলমান হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ও ইয়েল থেকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার (২২ এপ্রিল) রাতে পুলিশ নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগের দিন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এদিন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস বাতিল করা হয়। বার্কলে, এমআইটিসহ দেশটির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও অনুরূপ প্রতিবাদ গড়ে উঠেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভ এবং বাকস্বাধীনতা প্রশ্নে বিতর্কের উত্তাপ ছড়াতে থাকে। ইসরায়েল সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ওই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়া ২৫৩ জনকে জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয়। প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস ও জিম্মিদের মুক্ত করার লক্ষ্যে গাজায় সবচেয়ে তীব্র যুদ্ধ শুরু করে। অঞ্চলটির হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এ পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীরা বলেছেন, সেখানে ইহুদি-বিদ্বেষী এবং ইসলাম-বিদ্বেষ প্রসূত উভয় ধরনের ঘটনাই বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার ক্যাম্পাসের বিক্ষোভ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘ইহুদি-বিরোধী প্রতিবাদের’ পাশাপাশি ‘যারা বোঝেন না, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কী চলছে’ তাদেরও নিন্দা করেছেন।
গত সপ্তাহে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে গিয়ে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ক্যাম্পাসের এই প্রতিবাদ আন্দোলন বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে।
সোমবার এক বিবৃতিতে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সব ক্লাস ভার্চুইয়ালি অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মিনোসে শফিক ‘ভীতিকর ও হয়রানিমূলক’ ঘটনা ঘটছে বলে উল্লেখ করেন। ড. শফিক বলেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, এমন ব্যক্তিদের দ্বারা উত্তেজনা প্রসারিত হয়েছে, যারা ক্যাম্পাসে এসেছেন তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে।
এদিকে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীরা বিজনেস স্কুল এলাকাজুড়ে তাঁবু স্থাপন করেছে। অন্যান্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা কর্তৃপক্ষের প্রতি ‘ইসরায়েলি দখলদারিত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া অর্থ ও অনুদান’ প্রকাশ করতে এবং তা প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশ সেখানে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের নিউ হ্যাভেন শহরের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের সরে যেতে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করেছে।
বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটসের ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, এমারসন কলেজ ও টাফ্টসেও প্রতিবাদ শিবির স্থাপন করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের এই বিক্ষোভ নিয়ে অবশ্য ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষোভকারীরা ইহুদি-বিরোধিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের সমালোচনা ইসরায়েলি রাষ্ট্র ও তার সমর্থকদের জন্য বলেও জানান।
রোববার বিক্ষোভকারীদের সংগঠন কলম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা যেকোনো ধরনের ঘৃণা বা ধর্মান্ধতাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি।’ এতে তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না এমন ক্ষতিকর ব্যক্তিদেরও সমালোচনা করা হয়।
এই সংকটের সমাধান করতে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মিনোসে শফিক।
গাজার ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারীরা সম্প্রতি দেশজুড়ে প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করেছে। শিকাগোর ওহার ও সিয়াটল-টাকোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশাপাশি সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজ ও নিউইয়র্কের ব্রুকলিন ব্রিজে যাতায়াত প্রবেশ সীমিত করে।