যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা ক্যাম্পাসজুড়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ, চলছে গ্রেপ্তার-উচ্ছেদ
গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলছে। পাশাপাশি চলছে পুলিশের তৎপরতাও। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিবাদ শিবির গতকাল বুধবার (১ মে) তুলে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। খবর এএফপির।
নিউইয়র্কের ফোর্ডহাম ইউনিভার্সিটি থেকে বেশ কয়েকজনকে আটকের পাশাপাশি যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ শিবির ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় গণগ্রেপ্তারের পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে প্রতিবাদকারীরা বুধবার সন্ধ্যায় ব্যস্ত সময়ে একটি রাস্তা অবরোধ করে ক্যামব্রিজে ক্যাম্পাসের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান নেয়। এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বিরোধী পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ সদস্যদের।
ডালাসে টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে পুলিশ একটি যুদ্ধবিরোধী শিবির উঠিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি সেখান থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭ জনকে।
এপ্রিল মাসজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ। এসব বিক্ষোভে গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে গড়ে তোলা হয় তাঁবুর সাহায্যে তৈরি অস্থায়ী শিবির।
তবে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ও সিটি ইউনিভার্সিটিতে পুলিশের আচরণে নিজেদের হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী জশ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা লাঞ্ছিত হয়েছি, আমাদের নির্মমভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। আমাদের আঘাত করা হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে।’
নিজের শরীরের আঘাতের বিভিন্ন চিহ্নের কথা উল্লেখ করে নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে ইসাবেল নামের এক মেডিকেল শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের মাথায় আঘাত করা হয়েছে, এমনকি একজনকে পিটিয়ে অচেতন করে দেওয়া হয়েছিল, সিঁড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।’
এ ধরনের বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কথা বলার অধিকারের সঙ্গে অপরাধমূলক আচরণ, ইহুদি বিদ্বেষ বিরোধী আচরণ এবং ঘৃণাসূচক উক্তির অবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের নজিরবিহীন হামলার মাধ্যমে সূত্রপাত হয় গাজা যুদ্ধের। হামাসের হামলায় এক হাজার ৭০ জন ইসরায়েলি নিহত হয় যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। পাশাপাশি হামাসের যোদ্ধারা প্রায় আড়াইশ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসে। পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে গাজা উপত্যকায় বিরামহীন বোমাবর্ষণ ও সামরিক অভিযান চালায় ইসরায়েল। হামলায় এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার পাঁচশর বেশি লোক নিহত হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই নিরীহ শিশু ও নারী।