আইসিজেতে আবারও গাজায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে আবেদন দক্ষিণ আফ্রিকার
গাজা উপত্যকায় গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান থামানোর জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে শুনানির সময় যুদ্ধবিরতির আদেশ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। খবর আলজাজিরার।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীদের দল আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতকে বলেছে, হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুন। এ যুদ্ধ বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড স্পষ্টভাবে গণহত্যার অভিপ্রায়কে নির্দেশ করে।
ইসরায়েলকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করতে নেদারল্যান্ডসের হেগ ভিত্তিক এই আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকা গত ডিসেম্বরে মামলা করার পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় সহিংসতার বিষয়ে তিনবার শুনানি হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বশেষ করা অনুরোধকে স্বাগত জানিয়েছে মালয়েশিয়া। দেশটি বলেছে, তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ করতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রচেষ্টার প্রশংসা এবং দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। রাফায় ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দেশটির সর্বশেষ অনুরোধকে স্বাগত জানায় মালয়েশিয়া।
এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘৬৪ বর্গকিলোমিটারের রাফা, যেখানে ১৪ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয়ের জন্য ভিড় করেছেন, সেখানে ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে বিশাল মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইসরায়েলের প্রতি সামরিক অভিযান বন্ধের দাবি জানানোর সম্মিলিত দায়িত্ব রয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘১৯৬৭ এর পূর্ববর্তী সীমানার ওপর ভিত্তি করে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করায় মালয়েশিয়ার অটল সমর্থন রয়েছে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়ার আইনের প্রভাষক জুলিয়েট ম্যাকইনটায়ার বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা আইসিজের বিচারকদের বলেছে, গাজায় গণহত্যার মতো ঘটনা বন্ধ করার এটাই শেষ সুযোগ।
ম্যাকইনটায়ার বলেন, ‘এবার চতুর্থবারের মতো আদালতে আবেদন করল দক্ষিণ আফ্রিকা। আগের প্রতিবারই দক্ষিণ আফ্রিকা কোনো না কোনোভাবে যুদ্ধবিরতির আদেশ চেয়েছে। আজ শুনানিতে আমরা দেখলাম, তারা আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।’
জুলিয়েট ম্যাকইনটায়ার আরও বলেন, ‘তারা (দক্ষিণ আফ্রিকা) গণহত্যা চালানোর বিষয়ে যুক্তি এবং অবশ্যই বিভিন্ন কার্যকলাপের প্রমাণ যুক্ত করেছে, যা আমরা সবাই খবরে দেখেছি। আদালতকে তারা বলেছে, এটি এখন না হলে কখনই নয়। আপনি যদি ইসরাইলকে রাফা থেকে সরে আসার নির্দেশ না দেন, তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।’
আজ শুক্রবার আদালতে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে শুনানি হবে। এ বিষয়ে ম্যাকইনটায়ার বলেন, ‘ইসরায়েল আজও আদালতে আগের মতো একই কথা বলবে যে, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা চালানোর কোনো ইচ্ছা নেই। সেখানে এমনটি হচ্ছে না। তারা সম্ভবত যুক্তিও দেবে, ইসরায়েল আদালতের আগের আদেশ মেনে চলছে। গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছেছে তা নিশ্চিত করতে তারা সেখানে অবস্থান করছে, এমনটিও জানাতে পারে।’
ম্যাকইনটায়ার আরও বলেন, ‘ইসরায়েল বলতে পারে, তারা গণহত্যা নয়, বরং হামাসের বিরুদ্ধে সেখানে যুদ্ধ করছে। কারণ, হামাসের হামলার কারণে সেখনে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের সম্ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, গাজা উপতক্যার তুলকারেম শহরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গুলি করে এক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এ সময় গুলিতে আহত হয়েছে আরও একজন।
খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শহরে হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের সময় তাদের গুলিতে হতাহতের কাছে অন্যদের আসতেও বাধা দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।