চা বিক্রেতার ছেলে থেকে জনসেবার নায়ক মোদি
পশ্চিমা দেশগুলো এক সময় এড়িয়ে চললেও এখন সাগ্রহে যাকে প্রশ্রয় দেয় তার নাম নরেন্দ্র মোদি। ভারতে তার নেতৃত্বে টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, এই প্রধানমন্ত্রী তার দেশকে ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য থেকে দূরে সরিয়ে সবার আগে হিন্দু—এই ধারার রাজনীতিতে নিয়ে এসেছেন।
এএফপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মোদির রাজনৈতিক উত্থান যদিও বাধাগ্রস্ত হয়েছিল এই শতকের সবচেয়ে সমালোচিত ধর্মীয় দাঙ্গার কারণে। আবার তার শাসনামলেই মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি সৃষ্টি হয়েছিল শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব। তবে, প্রথমবার ক্ষমতায় আসার এক যুগ পর ৭৩ বছর বয়সী এই ব্যক্তিকে এখন বিশ্বের জনপ্রিয় নেতাদের সারিতে দাঁড় করানো যায় বেশ আস্থার সঙ্গেই।
আজ মঙ্গলবার (৪ জুন) ভারতের নির্বাচনে নিজেদের বিজয় ঘোষণা করেছেন মোদি। আর নির্বাচনি ফলাফলে দেখা যাচ্ছে তার দল ২০১৯ সালে এর আগের নির্বাচন থেকে বেশ কিছু কম ভোট পেয়েছে, আর হারিয়েছে ৬০টিরও বেশি আসন।
সমর্থকরা নরেন্দ্র মোদির কঠোর ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা করে, তাকে মনে করে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশ্বাসের একজন সেবক। তাকে তুলনা করা হয় পৌরাণিক কাহিনীর নায়কের সঙ্গে যার শেকড় গাঁথা বিনয়ের শক্তিতে।
নির্বাচনে বিরোধীদের এক হাত নিয়ে এক সমাবেশে মোদি বলেছিলেন, ‘তারা আমাকে অপছন্দ করে খুব নিচু অবস্থান থেকে আমার উঠে আসার কারণে। কেননা খুব গরিব পরিবার থেকে এসে আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। তারা এই সত্যকে কখনোই আড়াল করতে পারেনি।’
নরেন্দ্র মোদির জন্ম ১৯৫০ সালে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে। রেল স্টেশনের চা বিক্রেতা বাবার ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। একজন গড়পড়তা ছাত্র হলেও উদ্দীপনামূলক বক্তব্যে তার বাগ্মীতার প্রমাণ পাওয়া যায় স্কুলের বিতর্কে আর নাট্যদলের সঙ্গে নাটক পরিবেশনায়। তবে তার রাজনৈতিক সত্তার বীজটি রোপন হয় মাত্র আট বছর বয়সে রাষ্ট্রীয় সয়ংসেবক সংঘে (আরএসএস) যোগ দেওয়ার মাধ্যমে। আরএসএস ভারতের কট্টর জাতীয়তাবাদী সংগঠন হিসেবেই পরিচিত।
নরেন্দ্র মোদি নিজেকে সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ভারতে হিন্দুদের আধিপত্যকে তুলে ধরতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। আর এ কারণে ১৮ বছর বয়সে পারিবারিকভাবে বিয়ের সম্পর্কে জড়ানো মোদিকে সম্পর্কের সেই পিছুটানও আটকাতে পারেনি। যদিও তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে কখনোই কাগজে-কলমে বিচ্ছেদ টানেননি। তাই আরএসএসের শীর্ষ পদে যেতে নিয়মরক্ষার প্রয়াস হিসেবে তিনি ব্রহ্মচারীই থেকেছেন।
আজ ভারত তার অধিকার নিয়ে বিশ্ব মঞ্চে আবির্ভূত। মোদির শাসনামলে ঔপনিবেশিক আমলের ভারতকে দিয়েছে নতুন ধারার বিন্যাস। মোদির শাসনামলেই নতুন করে লেখা হয় পাঠ্যবই, ব্রিটিশ আমলের আইনগুলোকে মুছে দেওয়া হয় আধুনিক রূপ।
গত জানুয়ারিতে তার কাজের ধারা চূড়ান্ত রূপে আবির্ভূত হয় যখন তিনি অযোধ্যায় একটি নতুন হিন্দু মন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছিলেন। সেই জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে মোদি বলেছিলেন, মন্দিরের পবিত্রতা দেখাচ্ছে যে ভারত দাসত্বের মানসিকতা থেকে নিজেকে অনেক ওপরে নিয়ে গেছে। নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, ‘জাতি এখন নুতন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।’