ট্রাম্পের বিষয়ে আদালতের আদেশে আইনের শাসন ক্ষুণ্ন : বাইডেন
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফৌজদারী মামলার বিচার থেকে আংশিক ছাড় দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়কে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘বিপজ্জনক নজির’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। খবর বিবিসির।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এই আদেশ ‘আইনের শাসনকে’ ক্ষুণ্ন করেছে এবং এটি আমেরিকানদের জন্য ‘ভয়ানক ক্ষতি’।
এর আগে ট্রাম্প অবশ্য আদালতের সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্রের জন্য ‘বড় জয়’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার (১ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়, সাবেক প্রেসিডেন্টরা তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতার মাধ্যমে গৃহীত পদক্ষেপের জন্য ছাড় পাবেন, তবে ব্যক্তিগতভাবে গৃহীত পদক্ষেপের জন্য নয়। আদালতে ৯ সদস্যের বেঞ্চে ছয়জনই এই আদেশের পক্ষে এবং বাকিরা বিরোধিতা করেন। দেশটির ইতিহাসে এবারই প্রথম সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করেছে, সাবেক প্রেসিডেন্টরা যেকোনো ক্ষেত্রে অপরাধের অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে নিজেকে রক্ষায় করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদেশ দিয়েছিলেন নিম্ন আদালত। এ বিষয়ে আজ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংবিধান অনুযায়ী গৃহীত কিছু পদক্ষেপের জন্য বিচার থেকে ছাড় পাবেন বলে আদেশ দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারককে এখন নির্ধারণ করতে হবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ক্ষমতায় কোন কাজগুলো করা হয়েছিল, যা করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। আসন্ন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিচার শুরু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে সোমবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকায় কোনো রাজা নেই, এ নীতিতে এই জাতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আইনের কাছে আমরা সবাই সমান। কেউ নয়, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও না।’
‘আজকের (আদালতের) সিদ্ধান্তের অর্থ প্রায় এমন দাঁড়ায় যে, একজন প্রেসিডেন্ট কী করতে পারেন, তার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। যে লোকটি (ট্রাম্প) সেই উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ইউএস ক্যাপিটলে পাঠিয়েছিল, সেই দিন যা ঘটেছিল, তার জন্য সম্ভাব্য অপরাধমূলক শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনের আগে আমেরিকার জনগণ আদালতে এর জবাব পাওয়ার দাবি রাখে। কিন্তু, এখন, আজকের (আদালতের) সিদ্ধান্তের কারণে, এটি অত্যন্ত, অত্যন্ত অসম্ভাব্য হয়ে পড়ল’, যোগ করেন বাইডেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত ২০২০ সালের ভোটের ফল উল্টে দেওয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগের মামলায় ট্রাম্পের সুরক্ষা বাড়বে। ওই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী বাইডেনের কাছে হেরে যান। সর্বোচ্চ আদালতের এ আদেশে জর্জিয়াতে অনুরূপ অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে নির্বাচনি হস্তক্ষেপের অভিযোগের মামলাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
আদালতের এই আদেশকে স্বাগত জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লেখেন, ‘আমাদের সংবিধান ও গণতন্ত্রের বড় জয়। একজন আমেরিকান হিসেবে গর্বিত।’
সুপ্রিম কোর্টের এ আদেশের পক্ষে বিচারকরা যুক্তি দেন, সাবেক প্রেসিডেন্টদের তাদের কার্যালয়ে করা অফিসিয়াল কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মামলা চালানো হলে, তা রাজনৈতিক প্রতিশোধ ও স্বৈরাচারের দরজা খুলে দিতে পারে।
আদেশে বিচারকরা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট তার আনফিসিয়াল পদক্ষেপের জন্য কোনো ছাড় পাবেন না এবং প্রেসিডেন্ট যা করেন সবই সরকারি নয়। প্রেসিডেন্ট আইনের ঊর্ধ্বে নন। তবে, কংগ্রেস সংবিধানের অধীনে নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব পালনে প্রেসিডেন্টের আচরণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে পারে না।’
বিচারকরা জোর দিয়ে বলেন, ‘এই ছাড় শুধু ট্রাম্পের জন্য নয়, বরং রাজনীতি এবং দল-মত নির্বিশেষে যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রেসিডেন্টের জন্য প্রযোজ্য।’
আদালতে ৯ সদস্যের বেঞ্চে ছয়জনই এই আদেশের পক্ষে এবং বাকিরা বিরোধিতা করেন। এ আদেশকে সমর্থন করা ছয় বিচারকের মধ্যে তিনজনকে ট্রাম্পই নিয়োগ করেছিলেন। তবে বিচারক সোনিয়া সোটোমায়র সোমবার সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে দেওয়া এ আদেশকে প্রত্যাখ্যান করে যুক্তি দেন, এই রায় ক্ষমতার অপব্যবহারকে বৈধ করবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচারক সোনিয়া লেখেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দেশের এবং সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি। সংখ্যাগরিষ্ঠের যুক্তির অধীনে তিনি যেকোনো উপায়ে তার সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করলে, তার বিরুদ্ধে এখন ফৌজদারি মামলা করা যাবে না।’
‘রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করার জন্য নৌবাহিনীর সিল টিম ৬-কে আদেশ দিলে? ছাড়। ক্ষমতা ধরে রাখতে সামরিক অভ্যুত্থান সংগঠিত করলে? ছাড়। দণ্ডিতকে ক্ষমার বিনিময়ে ঘুষ নিলে? ছাড়। ছাড়, ছাড়, ছাড়’, যোগ করেন বিচারক সোনিয়া সোটোমায়র।
বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট নেতা সোমবার শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছেন। কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ এই আদেশকে ‘আমেরিকান গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন।