বেসরকারিভাবে পণ্য যাচ্ছে গাজায়
একদিকে বজ্রপাতের মতো বোমার ঝলকানি, অন্যদিকে ক্ষুধাজর্জরিত গাজায় পণ্য সরবরাহের জন্য অপেক্ষা। ইসরায়েলের দক্ষিণ সীমান্তের কাছে কাঁটাতারে ঘেরা পার্কিং এলাকায় ট্রাক ড্রাইভার ইটজিক পরিদর্শন এলাকা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষার পাশাপশি তৈরি করছিলেন পণ্যের তালিকা। গাজায় পাঠানোর জন্য লরি ভর্তি ছিল ডিম, মুরগি, তিল, মশলা, চাপাতা ও কফি। এসব পণ্যের সবগুলোই পাঠানো হচ্ছে বেসরকারি বাজারে, যা ফিলিস্তিনি ও মানবিক সহায়তা কর্মীদের দৃষ্টিতে অসাধ্য কাজের মতো। খবর এএফপির।
এরইমধ্যে কেরেম শালোম ক্রসিংয়ের অন্য প্রান্তে সাহায্য সামগ্রীর সরবরাহ থেমে গেছে আর এই অচলাবস্থার জন্য ইসরায়েল ও জাতিসংঘ এক অপরকে দোষ দিচ্ছে। আর এতে পণ্যের স্বল্পতার কারণে গাজাবাসীর দুঃখ-কষ্ট বাড়ছেই।
নিজের পুরো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ড্রাইভার ইটজিক জানান, পণ্যগুলো বেশিরভাগই এসেছে বেসরকারি খাত থেকে। তিনি বলেন, ইসরায়েলের কাছে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরও তিনি এই রুটে বিকাশমান এই শিল্পের কারণে টিকে রয়েছেন। যদিও গাজায় পণ্য পরিবহণে ইসরায়েলের ডানপন্থি রাজনৈতিক কর্মীদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে।
এএফপির প্রতিবেদন বলছে, গাজার ২৪ লাখ লোককে খাবারের যোগান দিতে সরবরাহ ব্যবস্থা কিছুটা হলেও চালু রেখেছে ইসরায়েল। দেশটি জাতিসংঘের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে সাহায্য সামগ্রী বিতরণ না করার অভিযোগ করে আসছে, আর একারণেই চেকপোস্টের অপর প্রান্তে পণ্যের স্তূপ জমে আছে।
জাতিসংঘ অবশ্য প্রবেশের সীমাবদ্ধতা, নিরাপত্তাহীনতা, ভাঙাচোরা রাস্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার মতো কারণগুলো উল্লেখ করেছে কেরেম শালোম থেকে গাজার মধ্যাঞ্চলে সাহায্যপণ্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে।
কেরেম শালোম ক্রসিংটি রাফাহ শহরে পণ্য পৌঁছে দিতে প্রাথমিক সংযোগকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সেখানে হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। আর এ কারণে কেরেম শালোম ক্রসিংটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডটিতে বাণিজ্যিক পণ্য সরবরাহ করার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি বেসামরিক লোকজনের দেখভাল করতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সংগঠনের মুখপাত্র সিমি জুয়ারেটজ বলেন, ‘এই মুহূর্তে সাহায্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চাইতে বেসরকারি খাত ভালো কাজ করছে।’
গতকাল বুধবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের এই চেকপয়েন্ট পরিদর্শনে আনা হয়। এ সময় সেখানে তরমুজ, চেরি, টমেটো, কমলা, আলু ও ডাল ভর্তি ঝুড়ি দেখা যায়। এ সময় আরও দেখা যায় মরুভূমির এই এলাকায় হাতে টানা দরজা খুলে দিয়ে ডজন খানেক লরিকে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এসব ট্রাকে মালামাল বোঝাই করে গাজায় পাঠানো হবে। তবে, এসময় সাংবাদিকদের পরিদর্শন কাজে নেতৃত্ব দেওয়া ইসরায়েলি সৈন্যরা ফিলিস্তিনি ড্রাইভারদের সঙ্গে এএফপিকে কথা বলার অনুমতি দেয়নি।
গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কেরেম শালোম ক্রসিংটি খুলে দেওয়া হয়। এই চেকপয়েন্টটি দিয়ে এখন গড়ে ২৫০টি ট্রাক পারাপার হচ্ছে। যদিও তা জাতিসংঘের নির্দেশিত পাঁচশ ট্রাক চলাচলের নিচে।
এদিকে, গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলকে ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার অধিবাসীদের না খেয়ে থাকতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ করেছে। তারা জানিয়েছে অক্টোবরের পর থেকে সেখানে না খেয়ে ৩৪ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছে। ইসরায়েল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তবে মরিয়া ভাবের মধ্যেও ধীরলয়ে কেরেম শালোম চেকপয়েন্টে ট্রাক ড্রাইভারদের ব্যস্ততা বাড়ছেই। এ বিষয়ে ইটজিক বলেন, ‘আমি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে কাজ করছি। আমি আমার গাজাবাসী সহকর্মীদের ভালো করে চিনি। তবে তাদের প্রতি যা হচ্ছে তার জন্য আমার দুঃখ হয়।’