ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মাস্কের দ্বারস্থ ইরান
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তেজনা কমানো ও সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে এবার মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও ধনকুবের ইলন মাস্কের সঙ্গে দেখা করেছেন ইরানের কর্মকর্তারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি সোমবার নিউইয়র্কে মাস্কের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, আলোচনায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি দেশটির সমর্থন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু বিষয়ে উঠে আসে। তবে, বৈঠকে দুপক্ষের মধ্যে কোনো বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ইরানের পক্ষ থেকেই মাস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিম এই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি, আবার অস্বীকারও করেনি। ইরানের জাতিসংঘ মিশনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
নতুন প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সিনেটর মার্কো রুবিও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে রিপাবলিকান নেতা মাইক ওয়াল্টজসহ পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কঠিন ব্যক্তিত্বের নাম ঘোষণা করার পরপরই এ ধরনের পদক্ষেপ নিল ইরান।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বিরোধিতা করে ইরান। এখন তিনিই নির্বাচিত হওয়ায় ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসনই ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে। পাশাপাশি প্রয়াত জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দেয়।
এদিকে, নির্বাচনি প্রচার চলাকালে ট্রাম্পকে হত্যা করতে ইরান থেকে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলে তথ্য প্রকাশ করেছে মার্কিন বিচার বিভাগ। এই অপরাধে এক ব্যক্তিকে অভিযুক্তও করা হয়েছে যার দাবি, ইরানের এক সরকারি কর্মকর্তা ট্রাম্পকে হত্যার করতে তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
এই ‘ষড়যন্ত্রকে’ ট্রাম্পসহ মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্যবস্তু করতে ইরানের চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মকর্তারা। উদাহরণস্বরূপ তারা বলেছেন, গত গ্রীষ্মেও আমেরিকান কর্মকর্তাদের হত্যার উদ্দেশে ইরানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এক পাকিস্তানি ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে মার্কিন বিচার বিভাগ।
অবশ্য মার্কিনিদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়েছে, ১৪ অক্টোবর এক লিখিত বার্তায় বাইডেন প্রশাসনকে ইরান জানায় যে তারা ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করবে না।
ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা যুদ্ধ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল, এটি তারই প্রতিক্রিয়া ছিল বলে জানায় ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এ বিষয়ে জানতে ইরানের জাতিসংঘ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ‘দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বার্তা বিনিময়ের’ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয় না বলে জানায়।
পরে মিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শহীদ জেনালের সোলাইমানিকে হত্যার বিচার করার অঙ্গীকার করেছে ইরান। তবে অবশ্যই তা আন্তর্জাতিক আইন মেনে বিচারিক উপায়ে সম্পন্ন করা হবে।’
রাষ্ট্রের সব বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত দেওয়ার অধিকারী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বারবার ট্রাম্পের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করলেও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেতে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রেখেছেন ইরানের নতুন সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।