লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল নিয়ন্ত্রণের প্রাণপণ চেষ্টায় দমকল কর্মীরা
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ভায়বহ দাবানলটি শহরের অন্যতম অভিজাত এলাকার দিকে ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে দমকল কর্মীরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দমকল কর্মীরা প্যালিসেডসে জ্বলন্ত পাহাড়ে আকাশ থেকে পানি ও আগুন-নিরোধক রাসায়নিক প্রয়োগ করছেন। দাবানলটি আরও এক হাজার একর এলাকা গ্রাস করেছে এবং এখন ব্রেন্টউডের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
দ্রুত ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে দমকল কর্মীরা চেষ্টার সময় পানির লাইনে পানি না থাকায় ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এ বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তারা চাপের মধ্যে রয়েছেন।
রাতের দিকে বাতাস আরও প্রবল হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা আগুনকে আরও ছড়িয়ে দিতে পারে। দাবানলে ইতোমধ্যে অন্তত ১১ জন মারা গেছেন।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) লস অ্যাঞ্জেলেসের সুপারভাইজার লিন্ডসে হরভাথ বলেছেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি ভয়াবহ আতঙ্ক এবং হৃদয়বিদারক ঘটনার মধ্যে আরও একটি রাত অতিবাহিত করেছে।’
প্যালিসেডসের আগুন প্রায় ২৩ হাজার একর এলাকা ধ্বংস করেছে এবং মাত্র ১১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে সামান্য অগ্রগতি অর্জন করেন।
দাবানলটি ইতোমধ্যে ম্যান্ডেভিল ক্যানিয়ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে ব্রেন্টউডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, যেখানে আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, ডিজনির সিইও বব আইগার ও এনবিএ তারকা লেব্রন জেমসের বাসভবন রয়েছে। সেসব এলাকায় বাসিন্দাদের বাধ্যতামূলক স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই এলাকার মধ্যেই রয়েছে গেটি সেন্টার, একটি পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত জাদুঘর, যেখানে এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি শিল্পকর্ম রয়েছে। ভবনটি এখনও পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে।
দ্বিতীয় বৃহত্তম দাবানল ইটনের আগুন ১৪ হাজার একরের বেশি এলাকা ধ্বংস করেছে এবং ১৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অন্য দুটি ছোট দাবানল, কেনেথ ও হার্স্টের আগুন প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করে বলেছে, সান্তা আনাতে ঝড়ো বাতাস বয়ে যাবে এবং শনিবার ও রোববার আরও শক্তিশালী হবে। সান্তা আনার বাতাসই এই দাবানলের সূচনা করেছিল।
ক্যালিফোর্নিয়ায় সাহায্যের জন্য সাতটি প্রতিবেশী রাজ্য, ফেডারেল সরকার এবং কানাডা ও মেক্সিকো থেকে সাহায্য পাঠানো হয়েছে।
দাবানলের কারণ এখনও জানা যায়নি। দুটি বৃহত্তম দাবানল একসঙ্গে ম্যানহাটনের দ্বিগুণেরও বেশি এলাকা ধ্বংস করেছে।
প্রায় এক লাখ ৫৩ হাজার বাসিন্দাকে বাধ্যতামূলকভাবে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আরও এক লাখ ৬৬ হাজার বাসিন্দাকে সতর্ক করা হয়েছে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাধার বন্ধ থাকা এবং কিছু ফায়ার হাইড্রেন্টে পানি না থাকার বিষয়ে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) গভর্নর গ্যাভিন নিউজম তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার চিফ ক্রিস্টিন ক্রাউলি পানি সংকট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন একজন দমকল কর্মী একটি হাইড্রেন্টের কাছে পৌঁছায়, আমরা আশা করি সেখানে পানি থাকবে।’
চিফ ক্রাউলি অভিযোগ করেন, তার বিভাগের বাজেট কমানোর কারণে এবং মেকানিকের পদ বাদ দেওয়ার ফলে ১০০টিরও বেশি ফায়ার ট্রাক পরিষেবার বাইরে রয়েছে।
শনিবার লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস ফায়ার চিফ ক্রাউলির সঙ্গে তার মতবিরোধ নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কারেন বাস বলেন, ‘আমি একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলতে চাই, ফায়ার চিফ ও আমি এই দাবানল মোকাবিলা এবং জীবন বাঁচাতে মনোনিবেশ করেছি। আমাদের যেকোনো মতবিরোধ ব্যক্তিগতভাবে সমাধান করা হবে।’
লুটপাটের আশঙ্কায় সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কারফিউ কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
নিউজম শনিবার ঘোষণা করেছেন, ‘সম্প্রদায়গুলোকে সুরক্ষিত রাখতে’ তিনি ন্যাশনাল গার্ডের সংখ্যা দ্বিগুণ করে এক হাজার ৬৮০ সৈন্য মোতায়েন করবেন।
এখন পর্যন্ত ২০ জনের বেশি গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে চুরি, লুটপাট ও কারফিউ ভঙ্গের অভিযোগ।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফ রবার্ট লুনা বলেন, মৃতদেহ উদ্ধারকারী কুকুরসহ ৪০টি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাগুলো অনুসন্ধানে সহায়তা করছে।