ইউক্রেনে বন্দি উত্তর কোরিয়ার সেনা বিনিময়ের প্রস্তাব জেলেনস্কির
ইউক্রেনে বন্দি দুই উত্তর কোরিয়ার সৈন্য বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, রাশিয়া চাইলে ইউক্রেনের সঙ্গে বন্দি বিনিময় করতে পারে। উত্তর কোরিয়ার দুই সৈন্যর বিনিময়ে যুদ্ধবন্দি ইউক্রেনের সেনাদের ছেড়ে দিতে হবে।
আজ সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের এক পোস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এই প্রস্তাব দেন। খবর বিবিসির।
ওই পোস্টে জেলেনস্কি আরও বলেন, আমরা শিগগিরই আরও সেনা বন্দি করতে সক্ষম হবো, এটি শুধু সময়ের ব্যাপার । যেসব সেনারা উত্তর কোরিয়ায় ফিরে যেতে চান না, তাদের জন্য বিকল্প পথও রয়েছে। তাদেরকে এই যুদ্ধের আসল রহস্য বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দাবি, রাশিয়ার সেনাবাহিনী উত্তর কোরিয়ার সামরিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, তিন বছর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ন্যাটোকে আলটিমেটাম দিয়ে ইতিহাস পুনর্লিখনের চেষ্টা করেছিলেন, ‘কিন্তু এখন তিনি কিম জং উনের সামরিক সহায়তা ছাড়া টিকতে পারছেন না।’
এর আগে গত শনিবার (১১ জানুয়ারি) জেলেনস্কি জানান, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল থেকে দুই উত্তর কোরীয় সেনাকে আটক করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। বন্দি দুই সেনা ইউক্রেনের সিকিউরিটি সার্ভিসের (এসবিইউ) হেফাজতে রয়েছেন। সেখানে তাদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সেনাদের বন্দি করার জন্য প্যারাট্রুপারস ও স্পেশাল অপারেশন ফোর্সের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এটি সহজ কাজ ছিল না।’ রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া সাধারণত আহত উত্তর কোরীয় সেনাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়, যাতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ না পাওয়া যায়।
ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, গত ৯ জানুয়ারি উত্তর কোরীয় সেনাদের বন্দি করা হয়। এর পরপরই তাদেরকে জেনেভা কনভেনশনের (যুদ্ধে বন্দি সেনাদের মানবিক আচরণের চুক্তি) নির্ধারিত সব প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তাদেরকে কিয়েভে নিয়ে যাওয়া হয়।
সংস্থাটি আরও বলেছে, বন্দিদের এমন পরিবেশে রাখা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করে।
এসবিইউ দবি করেছে, আটকরা ইংরেজি, রুশ বা ইউক্রেনীয় ভাষায় কথা বলতে পারেন না। এজন্য তাদেরকে কোরীয় ভাষায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ব্যাপারে দক্ষিণ কোরীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএস সদস্যরা তাদেরকে সহযোগিতা করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রাম ও এক্সে পোস্টে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্ব নিয়েছে। আটক সেনাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য সাংবাদিকদের সুযোগ দিতে সংস্থাটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের জানা দরকার আসলে কী ঘটছে।
জেলেনস্কি ওই পোস্টের সঙ্গে চারটি ছবি যুক্ত করেছেন। এর মধ্যে দুটি ছবিতে আহত ব্যক্তিদের দেখা যায়। আরেকটি ছবিতে একটি লাল রুশ সামরিক কার্ড দেখানো হয়েছে।
এসবিইউ জানিয়েছে, আটক এক সেনার কাছে ভুয়া নামে নিবন্ধন করা রুশ সামরিক পরিচয়পত্র ছিল। আরেক সেনার কাছে কোনো পরিচয়পত্রই ছিল না।
গোয়েন্দা সংস্থা আরও বলেছে, প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আইডি কার্ড বহনকারী সেনা জানান, ২০২৪ সালে রাশিয়ায় তাকে এই কার্ডটি প্রদান করা হয়েছিল। তখন উত্তর কোরিয়ার কিছু কমব্যাট ইউনিট এক সপ্তাহের জন্য আন্তঃসংযোগ প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিল। বন্দি হওয়া ওই সৈনিক জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি প্রশিক্ষণে যাচ্ছিলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নয়। অপর বন্দি চোয়ালে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় কথা বলতে পারছেন না। তিনি লিখিতভাবে কিছু তথ্য দিয়েছেন।
পিয়ংইয়ং ও মস্কোর সামরিক সহযোগিতা চুক্তির আওতায় গত নভেম্বরে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সাহায্য করতে প্রায় ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করে উত্তর কোরিয়া- এমন দাবি করে ই্উক্রেন। ওইসব সেনাদের রুশ নাম ও জন্মস্থানসহ ভুয়া সামরিক কাগজপত্র দেওয়ার অভিযোগও তোলে কিয়েভ।