আমার জন্মদিনে হৈচৈ করা হয় না : আসাদ চৌধুরী
আসাদ চৌধুরী। নামেই তাঁর পরিচয়। দেশের স্বনামধন্য ব্যক্তি তিনি। মূলত কবি হলেও সাহিত্যের বহু শাখায় তাঁর পদচারণা। শুধু লেখালেখি নয়, টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেও তিনি জনপ্রিয়। তাঁর জন্মদিন আজ। বিশেষ এই দিনে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সাহিত্যিক। তাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নাইস নূর।
আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। পরিবারের সাথে জন্মদিন কীভাবে পালন করেছেন?
আসাদ চৌধুরী : প্রথমে বলতে চাই, আমার জন্মদিন কখনো হৈচৈ করে উদযাপন করা হয় না। করিনি কখনো। জার্মানিতে যখন ছিলাম সেখানকার মানুষজন জন্মদিনটাকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিত। আমার প্রত্যেক জন্মদিন খুব ঘটা করে তাঁরা পালন করেছিলেন।
আর গত বছর ৫ নভেম্বর কানাডার টরন্টোতে আমার মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্মদিনের সুন্দর এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আমার পরিবারের সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলে। আমার বন্ধুবান্ধবরাও ছিলেন।
এর মানে কাগজে-কলমে আপনার জন্মদিন আজ। আর ৫ নভেম্বর আপনার সত্যিকারের জন্মদিন?
আসাদ চৌধুরী : (হাসি) আমি এটা বলতে চাইনি আসলে। কখনো কাউকে বলা হয়নি। আসলে বাংলাদেশে অনেকের দুই রকম জন্মদিন পালন করা হয়। একটা সার্টিফিকেট জন্মদিন আর একটা সত্যিকারের। আমার সার্টিফিকেট জন্ম তারিখটাই সবাই জানে। যেহেতু জন্মদিনের অনুষ্ঠান ঘটা করে করা হয় না তাই অনেকের এটা অজানা।
জন্মদিনে সময় কীভাবে পার করেছেন?
আসাদ চৌধুরী : বাসায় আছি। অনেকে আমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। সবাইকে আমিও রিপ্লাই দিচ্ছি।
এবার অন্য প্রসঙ্গে কথা বলি। এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আপনার বেশকিছু নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে। সে সম্পর্কে কিছু বলুন।
আসাদ চৌধুরী : বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে বের হয়েছে কবিতার বই ‘আদিম ঠিকানা’। এ ছাড়া অনেক বই তো প্রকাশিত হয়েছে এবং ফেব্রুয়ারিতে আরো নতুন বই আসবে। ২৬ কিংবা ২৭ তারিখে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার নিবেদিত কবিতার বই প্রকাশিত হবে। বইটির কাজ এখন চলছে।
বর্তমানে নতুন কোনো সাহিত্যকর্মে হাত দিয়েছেন?
আসাদ চৌধুরী : এ বছর অনেক কাজ করছি আমি। যেকোনো কারণেই হোক ঈশপের গল্পগুলো আবারও লিখতে চাই। তবে এই অনুবাদ গল্পগুলোতে আমার নিজস্ব চিন্তার অনেক বেশি বহিঃপ্রকাশ থাকবে। তবে সেটা মূল পাণ্ডুলিপি ঠিক রেখেই আমি করতে চাই। ওখানকার রাজকন্যারা হয়তো গাউন পরে আর আমার লেখায় রাজকন্যারা শাড়ি পরে। আরো অনেক পরিবর্তন থাকবে।
আগের বইমেলা ও এখনকার বইমেলার মধ্যে কী ধরনের পার্থক্য খুঁজে পান?
আসাদ চৌধুরী : অনেক পার্থক্য। বই ছাপা ও বাঁধাই এখন অনেক উন্নত হয়েছে। মেলায় প্রকাশক ও লেখকরা পরিপাটি হয়ে আসেন। এটা দেখতে ভালো লাগে। আগে তো এত মিডিয়া ছিল না। হাতেগোনা দুই একটা পত্রিকা ছিল। এখন মেলায় ঢুকতেই অনেক টিভি চ্যানেল সাক্ষাৎকার নিতে আসে। ভালোই লাগে। প্রযুক্তির প্রসার বেড়েছে। এটা অনেক ইতিবাচক ব্যাপার।
তরুণ লেখকদের নিয়ে আপনার অভিমত কী?
আসাদ চৌধুরী : এখনকার তরুণ লেখকরা অনেক ভালো করছেন। কোনো কোনো তরুণ লেখক প্রতীক ব্যবহার করে লিখছেন। কারো বাক্য চয়ন অসাধারণ। তবে সবাইকে ভালো বলব, এতটা উদার আমি হতে পারিনি। কিছু কিছু জায়গায় আমার মৃদু আপত্তি আছে। বর্তমান সময়ের সংকট নিয়ে তরুণরা যেটা লেখে কিংবা ইংগিত দেয় সেটা আমার অনেকসময় বোধগম্য হয় না। আবার অনেক তরুণ লেখকের নাম হওয়ার পর তাঁরা ধীরে ধীরে সরে যায়। এটা আর্থিক কারণেই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণেই হোক। সব লেখক তাঁদের কাজের প্রশংসা চান। তরুণ লেখকরাও এর বাইরে নন। অনেকে তাঁদের প্রত্যাশিত প্রশংসা না পেয়েও সরে যান। এটা অবশ্য তাঁদের দোষ নয়।
আর একটা ব্যাপার বলতে চাই, সৃজনশীলতা টাকা দিয়ে করানো সম্ভব নয়। একজন শামসুর রাহমান কিংবা হুমায়ূন আজাদ চাইলাম এবং পেয়েও গেলাম, সেটা সহজে হবে না।