ম্যানবুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ-২০১৬
বিচারক প্যানেলে তাহমিমা আনাম
ম্যানবুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ২০১৬-এর বিচারক প্যানেলে স্থান করে নিলেন বাংলাদেশি বংশদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক তাহমিমা আনাম। ম্যানবুকারের নিজস্ব ওয়েবসাইট দ্য ম্যানবুকার প্রাইজ ডট কম থেকেই জানা গেল এই সংবাদ। নৃ-বিজ্ঞানী, ঔপন্যাসিক ও কলাম লেখক তাহমিমা আনামের ত্রয়ী উপন্যাসের প্রথম পর্ব এ গোল্ডেন এজ সুনাম কুঁড়িয়েছে দেশে-বিদেশে। ২০০৭ সালে প্রকাশিত তাঁর এই উপন্যাস দ্য গারডিয়ান ফার্স্ট বুক অ্যাওয়ার্ড এবং কস্তা বুক অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফার্স্ট নোবেল পুরস্কার দুটির সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেয়েছিল। পরবর্তীকালে একই উপন্যাসের জন্য জয় করে নিয়েছেন কমনওয়েলথ রাইটার্স প্রাইজ ফর বেস্ট ফার্স্ট বুক। এই সিরিজের তৃতীয় বই দ্য গুড মুসলিম প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। ২০১৩ সালে তিনি গ্রান্টা ম্যাগাজিনস বেস্ট অব ইয়াং ব্রিটিশ নভেলিস্টস নির্বাচিত হন। জগৎজোড়া সমাদৃত পত্রিকাগুলোতে প্রায় নিয়মিতই লিখে চলেছেন তাহমিমা আনাম। এর মধ্যে দ্য নিউ স্ট্যাটসম্যান, দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য নিউইয়র্ক টাইমস উল্লেখযোগ্য।
তাহমিমা আনামের জন্ম ঢাকায় ১৯৭৫ সালে। বড় হয়েছেন প্যারিস, নিউইয়র্ক সিটি ও ব্যাংককে। তাঁর বাবা বাংলাদেশের সর্বাধিক পঠিত ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম আর পিতামহ বিখ্যাত সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমেদ। তাহমিমা আনাম ২০০৫ সালে হার্বার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে লেখালেখিই তাঁর পেশা। লেখালেখির শুরু থেকেই সবার দৃষ্টি কেড়েছেন তাহমিমা আনাম। ধারাবাহিক অর্জনের খাতায় এবার নতুনভাবে যোগ হলো আরেক অর্জন। আর তা হলো, ম্যান বুকার পুরস্কারের বিচারকের আসনে স্থান করে নেওয়া।
এই তালিকায় আরো যাঁরা আছেন তাঁরা হলেন :
বয়েড টঙ্কিন
ম্যানবুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ২০১৬-এর প্রধান বিচারক হবেন দ্য ইনডিপেনডেন্টের প্রবীণ লেখক ও কলামিস্ট বয়েড টঙ্কিন। অ্যাওয়ার্ড জয়ী সাংবাদিক আগে দ্য ইনডিপেনডেন্টের সাহিত্য সম্পাদক, সোশ্যাল পলিসি সম্পাদক ও নিউ স্ট্যাটসম্যান ম্যাগাজিনের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগেও দ্য বুকার প্রাইজ, দ্য কমনওয়েলথ রাইটার্স প্রাইজ ও ডেভিড কোহেন প্রাইজসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০১ সালে ইনডিপেনডেন্ট ফরেইন ফিকশন প্রাইজ ফর লিটারেচার ইন ট্রান্সলেশন কে তিনিই পুনর্গঠন করেন এবং প্রতিবছর তাঁর বিচারকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
ডেভিড বেলোস
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরাসি ও তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক ডেভিড বেলোস ম্যানবুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ২০১৬-এ আরেকজন বিচারক। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুবাদ ও আন্তসাংস্কৃতিক যোগাযোগ প্রোগ্রামের ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন। আলবেনিয়ার লেখক ইসমাইল কাদারের বই অনুবাদের জন্য ২০০৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পান এই অনুবাদক। যদিও তিনি অনুবাদটি মূল থেকে না করে করেছিলেন ফরাসি থেকে। অসংখ্য বইয়ের অনুবাদক এই লেখক একজন জীবনীকার ও সমালোচকও বটে।
ড্যানিয়েল মেডিন
ড্যানিয়েল মেডিন আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব প্যারিসে (এইউপি) অধ্যাপনা করছেন। একই সাথে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির লেখক ও অনুবাদক কেন্দ্র পরিচালনায় বলিষ্ঠভাবে জোগান দিয়ে যাচ্ছেন। দ্য কাহিয়ের সিরিজ এবং সঙ্গীত ও সাহিত্য ম্যাগাজিন দ্য হোয়াইট রিভিউয়ের সম্পাদক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি। ড্যানিয়েল মেডিন মূলত গবেষণা করছেন জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের আধুনিক গদ্য নিয়ে। তাঁর কাজের আরেকটি মূল ক্ষেত্র হলো আমাদের দেশে পরিচিত জার্মান সাহিত্যিক ফ্রানৎজ কাফকার যাবতীয় কর্ম ও তাঁর বৈশ্বিক সমাদর।
রুথ প্যাডেল
রুথ সোফিয়া প্যাডেল অ্যাওয়ার্ড জয়ী ব্রিটিশ কবি ও লেখক। কবিতা সমালোচনা, প্রকৃতিও তাঁর লেখালেখির গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সঙ্গীত ও বিজ্ঞানের সাথেও রয়েছে তাঁর ওতপ্রোত সম্পর্ক। তিনি কিংস কলেজ লন্ডনের পোয়েট্রি ফেলো, রয়েল সোসাইটি অব লিটারেচারের ফেলো এবং জুলোজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের কাউন্সিল মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিবিসিতে বন্যপ্রাণী, কবিতা ও সঙ্গীত নিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেন।
সর্বোপরি, ম্যানবুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ২০১৬-এর বিচারকরা বিচিত্র জ্ঞানের অধিকারী। বিশ্বসাহিত্যেও তাঁদের রয়েছে শক্তিশালী দখল। বেশির ভাগ বিচারকেরই অনুবাদ সাহিত্যের সাথে রয়েছে গভীর যোগাযোগ।
পুরস্কারের পাশাপাশি থাকছে আরো কিছু বৈচিত্র্য। ২০১৬ সাল থেকে পুরস্কারের আঙ্গিক পরিবর্তিত হচ্ছে। এবার থাকে প্রতি বছর ইংরেজিতে অনূদিত ও ইংল্যান্ডে প্রকাশিত যেকোনো একটি বইকে দেওয়া হবে এই পুরস্কার। আগে দুই বছর পরপর এই পুরস্কার দেওয়া হতো। উপন্যাস অথবা ছোটগল্প উভয়ই এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। অনুবাদক ও লেখককে সমানভাবে পুরস্কৃত করা হবে। উল্লেখ্য, ৫০ হাজার পাউন্ড সমমানের পুরস্কার বিজয়ী লেখক ও অনুবাদকের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে।
আরো চমক হলো, ২০১৬ সালের মার্চেই ১২ থেকে ১৩টি বইয়ের একটি দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করবেন বিচারকরা এবং এপ্রিলে প্রকাশ করবেন ছয়টি বইয়ের সংক্ষিপ্ত তালিকা। ২০১৬-এর মে মাসে প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত বিজয়ীর নাম।