হাওয়ায় দ্বীপের তিনটি কবিতা
১.
নন্দিনী, মৎস্যকুমারী ডাকছে আমায় !
নন্দিনী, হাওয়ায় স্রোতের বিপরীতে ভাবছি তোমায়
খুঁজছি তোমায় মাওয়ি দ্বীপের দুরন্ত বালুচরায়।
পিলসুজ ঢেউয়ের দোলায় আমার পেখম গেছে বেঁকে
দ্বিগুণ বাতাস উথলে উঠে ফেলবে যেন মহাসাগরের জলে।
তবু দাঁড়িয়ে মোলোকাই, একাদশী চাঁদের গড়ন যার
দেখছি তোমায় নভোলোকের রং যেখানে অনন্ত বিস্তার।
এরই মাঝে এলো সে দুলিয়ে তরঙ্গ, হাসিতে তার বৃষ্টি মধু মাখা
বলল, তোমার রংটি বেজাই মিঠে, আমার কিন্তু লাল রং খুব পছন্দ
লানাইয়ের দিকে চেয়ে তারপর সে অস্তগামীর খাবলে নিল অলিন্দ
বিস্ময় চোখ গেল থেমে, মৎস্যকুমারী ডাকছে আমায় জলধি যেন কম্পিত বিশাখা।
নন্দিনী,
এ কোন ডাক এলো আজ জলের পরীর আলতা বেগুন পায়ে?
কুহুলাউই দ্বীপে যেতে পড়লাম এ কোন তরল পাথর রোদে?
চলতে হবে কি মাওয়ি দেবের বর নিয়ে আজ অকূল পাথার ছুঁয়ে ?
কিলাউয়া অগ্নিস্নানে যে জীবন গেছে তোমার আমার চলে
তার সলতে পাকানো বসতি হলো গভীর গভীর মেঘ দোলা কোনো পালে
তবু জলের তোড়ে রহস্যময়ী থাকবে জুড়ে তোমার বহ্নি কোলে ?
২.
আলোকস্নাত দ্বীপের কবিতা!
নন্দিনী, এ দ্বীপে মহিমান্বিত মৃত্যু নেই!
মহাসমুদ্রের পার দিয়ে হাঁটছি আমি ক্রমাগত,
এখানে সব পথই গেছে বেগবতীর নীল আঙিনা ছুঁয়ে-
ঝরা পাতার দমকা হাওয়ায় জানালে আমাকে-
এই দ্বীপে মহিমান্বিত মৃত্যু আছে কি? মোলোকাই কত দূর? কিংবা কুহুলাউই?
শুনে আমি খুব পাথুড়ে হাসিতে নুয়ে পড়লাম বালুকাতটে-
এখানে মৃত্যুর কথা চিন্তা করে না কেউ,
এখানে পাখির পালকের মতো জীবনকে উড়ানো যায়,
যে সরীসৃপ সবুজ মলাট নিয়ে পারে এসে মুখ তুলে শুভেচ্ছা জানায়
সেও বলে যায় তিন’শ বছর বেঁচে থাকার কথা।
নন্দিনী
এখানে নেই পথের ক্লান্তি, নেই পথ হারানোর কুয়াশা-রাত-
সোনালি রোদের কলতান যখন কিলাউয়ির মাথায় থাকে নাচতে-
কিংবা হালেআকালার চূড়ায় দাঁড়িয়ে আমি মহাজীবনের কথা ভাবি
মনে রেখ, তখন তোমার দরোজায় দাঁড়িয়ে লাহাইনার দয়ালু রাজা কামেহামেহা-
তোমার দিকে ছুটে আসছে লুআও নৃত্যের কোরাল নারীরা-
সাত হাজার মাইল দূরের নকশাকালো চাঁদের আলোয়-
বনানী মখমলে ঘাসের বুকে তখন তুমি রয়েছ স্বপ্ন-নীড়ে,
ঘুম ভেঙে কৌতূহল মেখে কলাপাতা শাড়ির আঁচল ছড়িয়ে-
এলেবেলে তবু কর প্রহর গণনা যতনে,
থাকো মাউনালোয়ার পথিকের চোখে চেয়ে-
সংরাগে ভাব কত, ফিরব কবে কিরণনীলের ঢেউ দুলিয়ে রং চামেলির পথে।
৩.
নন্দিনী, তোমার প্রেম অফুরন্ত থাকুক চিরকাল!
এখানে মেতেছে সকলে জ্যোৎস্না ভরা মহাসাগরের নিবিড় মাঠে
আজ বড়ো উৎসব, দু’কূল ছাপিয়ে আলো ঝরছে গহীন পাহাড়ি নদীর ঘাটে।
সকলে আজ বড়ই ব্যস্ত,
তুমিও রয়েছ অফিসের হিসাব নিয়ে, নিজের ভেতর ঘর-কন্যা শত।
আমার কেটেছে সারাটা রাত তোমার মুখের দিকে চেয়ে
চাইনি তো কিছুই, কেবল নিঙড়ে দিয়েছি ভেতরে যা ছিল নিত্য নতুন
শত কষ্ট জেনেও সুখের একটি ক্ষণ দিয়ে সাজিয়ে রেখেছি আমৃত্যু এ জীবন।
নন্দিনী,
জানি তুমি আমার কাছ থেকে চলে গেলে দূরে, সুখে থাকবে
জানি তুমি বিকেলে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরলে, তোমার ঘরের মানুষ বিছানা বিছিয়ে দেবে
জানি তো তুমি যা পছন্দ করো সবই করবে- যাতে তোমার বিরাগ পালিয়ে যাবে পিছু তার,
সবই তো বুঝি সোনালি আলোর পাখি আমার।
নন্দিনী,
তবু খুব ইচ্ছে করে দু’জনে হাত ধরে হেঁটে যাব অতল ঢেউয়ের পার দিয়ে-
খুব শখ হয় মুনিয়ার মতো ঝোপে বানিয়ে থাকব দু’জনে চুম্বন নীড়ে
আশা জাগে চিরকাল রইব তোমার বুকের সবটুকু জুড়ে-
মধুপের সুর মেখে দীঘীর কালো জলে প্রবল প্রত্যয়ে।
নন্দিনী,
বিগত দিনের শেষে এখন সাদা মেঘের রাত
মহাসাগরের ঝড়ো বাতাস জেগেছে তোমার কালো চুলের কোলাহলে
নিশিডাক এক পাখি সন্ধ্যা অবধি লাফানো শেষ করে বসেছে সাদাবকের ডালে
সেও ডেকে যাচ্ছে তোমার নামটি ধরে, আর সারাটা সময়ের প্রাঙ্গণ ভরে আমার।
তুমি ঠিক তেমনি থেকো, যেমন আছো, সব রাশি তোমারই হোক সুখের।
ঠিকানা নেই তো আমার,
জীবনে তোমাকে ভালোবেসেই আমার ঠিকানা হলো অবশেষে।