রফিক আজাদ এক অনন্য নক্ষত্র : সৈয়দ শামসুল হক
‘রফিক আজাদ বেঁচে থাকবেন তাঁর অসাধারণ কবিতার মধ্য দিয়ে, থাকবেন তাঁর অগনিত পাঠকের নিবিড় স্মৃতিতে। একটি পরিপূর্ণ জীবন তিনি উদযাপন করে গেছেন আনন্দে, উল্লাসে, বেদনায়, কবিতায় ও স্বপ্নে। রফিক আজাদের কবিতার নিরন্তর পাঠের মধ্য দিয়েই আমরা স্মরণ করতে পারব বাংলা কবিতা, বাংলা সাহিত্য ও আমাদের শিল্পভুবনের এক অনন্য নক্ষত্রকে,’ সদ্যপ্রয়াত কবি রফিক আজাদ স্মরণে নাগরিক শোকসভায় সভাপতির বক্তব্যে কথাগুলো বলছিলেন লেখক সৈয়দ শামসুল হক।
কবি রফিক আজাদ স্মরণে বাংলা একাডেমি এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় এক নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত কবির স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাতের বক্তব্যের পর কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি ড. মুহাম্মদ সামাদের সঞ্চালনায় শোকসভায় রফিক আজাদের কবিতা পাঠে অংশ নেন কবি সৈয়দ শামসুল হক, কবি হারিসুল হক, রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, কবি হালিম আজাদ, নীরু শামসুন্নাহার, শাহাদাৎ হোসেন নিপু, কবি নাহার ফরিদ খান, কবি হানিফ খান প্রমুখ।
প্রয়াত কবি সম্পর্কে স্মৃতিচারণে অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমদ কবির, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি রবিউল হুসাইন, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কবি রবীন্দ্র গোপ, কবি মোহাম্মদ সাদিক, অধ্যাপক আসাদুজ্জামান, কবি ও অনুবাদক নাজমুননেসা পিয়ারি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি, সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ, শিশুসাহিত্যিক আলম তালুকদার প্রমুখ।
রফিক আজাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তার অগ্রজ নূরুল ইসলাম খান, স্ত্রী কবি দিলারা হাফিজ, পুত্র অভিন্ন আজাদ বক্তব্য দেন।
রফিক আজাদের অগ্রজ নুরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কবি রফিক আজাদ মানুষ হিসেবে যে বিরাটত্বের অধিকারী ছিলেন তাই তাঁকে অসংখ্য মানুষ ভালোবাসা দিয়েছে।’
স্ত্রী দিলারা হাফিজ বলেন, ‘কবির সঙ্গে যে জীবন আমি কাটিয়েছি তাতে বলতে পারি মানুষটি ভালোবাসার জন্য তাঁর জীবন ও কবিতাকে অভিন্ন করেছেন, ভালোবাসতে চেয়েছেন, ভালোবাসা দিয়েছেন।’
পুত্র অভিন্ন আজাদ বলেন, ‘রফিক আজাদ শুধু আমাদের আক্ষরিক পিতা নন, আদর্শেরও পিতা। তিনি প্রথম কবি রফিক আজাদ তারপর পিতা রফিক আজাদ। প্রথম মুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদ, তারপর পিতা রফিক আজাদ।’
স্মৃতিচারণা ও মূল্যায়নে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, বাংলা কবিতায় রফিক আজাদ এক অনিবার্য নাম। কবিতায় তিনি দেশ, মাটি ও মানুষের কথা যে অনন্য শিল্প আঙ্গিকে লিপিকৃত করেছেন তার কোনো তুলনা হয় না। অস্ত্র হাতে তিনি দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন আর কলম হাতে লিখেছেন তার শ্রেষ্ঠ কবিতা বাংলাদেশের কথা। মানুষ হিসেবে তিনি শোকের মানুষ ছিলেন না, ছিলেন চির আনন্দের মানুষ। তাই তার মৃত্যুতেও আমাদের কেবল শোক করা সাজে না বরং জীবনের সৃষ্টিশীল উদযাপনের শিক্ষাই রফিক আজাদ আমাদের দিয়ে যান।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘রফিক আজাদ একদা বাংলা একাডেমির যে উত্তরাধিকার সাহিত্যপত্রের সম্পাদক ছিলেন সেই উত্তরাধিকার পত্রিকা তাঁর স্মরণে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে এবং আগামী বইমেলার আগেই রফিক আজাদ রচনাবলি প্রকাশ করবে।’
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘রফিক আজাদ যেমন কবি হিসেবে ছিলেন অনন্য তেমনি কবিতা পরিষদের সভাপতি হিসেবে যে দায়িত্ববোধ ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন তা তাঁর সংগঠক সত্তারও পরিচয়বহ।’