কবিকে ‘বোল্ড’ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
স্বাধীনতা পদক না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছেই দাবি করেছিলেন, এই সম্মাননা অনেক দিন ধরেই তাঁর প্রাপ্য। কিন্তু বারবার তাঁকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। এবারও যদি এভাবে তাঁকে উপেক্ষা করা হয়, তবে পরে কখনো দেওয়া হলেও তিনি এ সম্মান গ্রহণ করবেন না।
স্ট্যাটাস দেওয়ার নয় দিন পর ‘স্বাধীনতা পদক ২০১৬’-এর জন্য আলাদাভাবে ঘোষণা করা হয় কবি নির্মলেন্দু গুণের নাম।
১৯৬০-এর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহপাঠী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কবি নির্মলেন্দু গুণ। আর সেই দাবিতেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর পদক চেয়েছিলেন কবি। এবং তাঁকে সেটা দেওয়াও হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে প্রচুর।
শেষমেশ প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গতকাল ২৪ মার্চ স্বাধীনতা পদক গ্রহণ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। পদক দেওয়ার পর সহপাঠী কবির সঙ্গে রসিকতা করলেন প্রধানমন্ত্রীও।
স্বাধীনতা পদক দেওয়ার পর কবির মুঠোয় কিছু একটা দিলেন। যদিও সে ক্ষুদ্র জিনিস কী ছিল, তা দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। অনুষ্ঠানের উপস্থিত অনেকেই সেটা খেয়াল করলেও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কবি বাড়তি কী পেলেন, সেটা বুঝতে পারেননি।
সেই রহস্য ভেঙেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ নিজেই। জানালেন ঘটনার সূত্রপাত নাকি ৪৮ বছর আগে।
স্বাধীনতা পদক পাওয়ার পর ফেসবুকে ‘প্রধানমন্ত্রীর রসিকতা’ নামে একটি পোস্ট দিয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। সেখানে তিনি লিখেছেন :
‘আমার গলায় স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৬-এর স্বর্ণপদক পরিয়ে দেওয়ার পর আমার হাতে একটি দুই টাকার কয়েন ধরিয়ে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এভাবে বোল্ড করবেন, আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
তাঁর সঙ্গে পরিচয়ের আটচল্লিশ বছর পর, আজ আমি তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতার কাছে সানন্দে পরাজিত হয়েছি।
আমি আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসে আমাকে অবিলম্বে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের জন্য জোর দাবি জানিয়েছিলাম। সেই দাবির ভাষা নিয়ে আমি নিজেই এখন বিব্রত বোধ করছি।
ভাবছি, তাঁর দেওয়া দুই টাকার ওই ধাতব মুদ্রাটি আমি আমার সংগ্রহশালায় সযতনে সংরক্ষণ করব। ওটাই হবে তার উপযুক্ত স্থান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি কখনো আমার সেই সংগ্রহশালা পরিদর্শন করেন, তবে আমাকে দেওয়া তাঁর ওই দুই টাকার ধাতব মুদ্রাটি তিনি সেখানে দেখতে পাবেন।’
এই পোস্টের সঙ্গে নিজের সংগ্রহশালার একটি ছবিও জুড়ে দিয়েছেন কবি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তাঁকে ফোন দেওয়া হলে কবি নির্মলেন্দু গুণ জানান, ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র নিহত হওয়ার পরপরই বন্ধুদের সঙ্গে মিলে একটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সে সময়ে তিনি ও তাঁর সমসাময়িক কবিদের কবিতা প্রকাশ করা হয়েছিল ওই সংকলনে। তখন ওই সংকলনটির দাম ছিল দুই টাকা। সেই সংকলনটি কেনার জন্য তিনি তখন তাঁর সহপাঠী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছিলেন। তবে শেখ হাসিনা তখন সেই সংকলন না কিনে কবিকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
৪৮ বছর পর সহপাঠী কবিকে পদক দিয়ে সম্মানিত করার সঙ্গে সঙ্গে সেই দুই টাকাও পরিশোধ করলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এর বদলে সেই কবিতা সংকলনটি হয়তো প্রধানমন্ত্রী আর পাবেন না।