ফয়েজ আহমেদ স্মরণে স্মারকগ্রন্থ
বাংলা একাডেমির ফেলো, বিশিষ্ট সাহিত্যিক-সাংবাদিক প্রয়াত ফয়েজ আহমেদ স্মরণে বাংলা একাডেমি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ‘ফয়েজ আহমেদ স্মারকগ্রন্থ’। ৪ মে-২০১৫, সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়। শিল্পী আবদুল ওয়াদুদের কণ্ঠে ‘ভয় হতে তব অভয় মাঝে’ শীর্ষক রবীন্দ্রসংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পর তাঁকে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও কামাল লোহানী সম্পাদিত এবং বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘ফয়েজ আহমেদ স্মারকগ্রন্থ’-এর আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচনের পর স্মৃতিচারণ ও আলোচনায় অংশ নেন কবি সৈয়দ শামসুল হক, ভারত থেকে আসা গবেষক অধ্যাপক মন্দিরা ভট্টাচার্য, অধ্যাপক বুলবন ওসমান, সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, নাট্যজন আতাউর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইকবাল বাহার চৌধুরী, সাংবাদিক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, নারীনেত্রী ও গবেষক মালেকা বেগম, কাজী মদিনা, ড. নিয়াজ জামান, অধ্যাপক জাহেদা আহমেদ, সাংবাদিক ডিপি বড়ুয়া, সাংবাদিক হারুন হাবীব, অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, অধ্যাপক আকমল হোসেন, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ফয়েজ আহমেদ ছিলেন বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীল মানুষ। শৈশব থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। বাংলা শিশুসাহিত্যে তাঁর অবদান যেমন অনন্যসাধারণ, তেমনি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তিনি নক্ষত্রপ্রতিম। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা এবং রিপোর্ট সংকলন ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ উত্তরপ্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য সদাশিক্ষণীয় উপাদান সরবরাহ করে। তিনি পাকিস্তান আমলে যেমন স্বাধিকার সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন, কারারুদ্ধ হয়েছেন, তেমনি মুক্তিযুদ্ধ থেকে নব্বইয়ের দশকে গণতন্ত্রের আন্দোলনে পালন করেছেন অনন্য ভূমিকা। আশির দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় কবিতা পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গঠনের পাশাপাশি দেশের প্রথম আর্ট গ্যালারি শিল্পাঙ্গন প্রতিষ্ঠা, লেখকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লেখক ইউনিয়ন গঠন, মুক্তিসংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ দলিল সংরক্ষণে সমাজতান্ত্রিক আর্কাইভস প্রতিষ্ঠা তাঁর অসামান্য কীর্তি। তাঁরা বলেন, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার দ্বারা ফয়েজ আহমেদ সব মানুষকে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বজ্রবলিষ্ঠ অবস্থান তাঁর বৃহৎ মানবিক সত্তারই পরিচয়বহ। বক্তারা বলেন, বাংলা একাডেমি ফয়েজ আহমেদ স্মরণে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করে বিস্মৃতিপরায়ণ সময়ে ফয়েজ আহমেদের মতো মানবিক প্রদীপকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ফয়েজ আহমেদের জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। একাধারে তিনি ছিলেন সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিক। তাঁর সব কর্মপ্রবর্তনা বিস্তৃত ছিল একটি উদার-ন্যায়পর ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।