আজহারী মাজহারী রাজহারী জামায়াতের প্রোডাক্ট : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত ধর্মীয় বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে ‘জামায়াতের প্রোডাক্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ। তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে আজহারীসহ কিছু ধর্মীয় বক্তা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে জামায়াতের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার দুপুরে জামালপুর শহরের গৌরীপুর কাচারি এলাকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। আমি তো নাম বলে আর বাড়াইতে চাই না। আজহারী মাজহারী রাজহারী এগুলো যে সমস্ত কথাবার্তা বলে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে, এরা কিন্তু জামায়াতের প্রোডাক্ট। এদের বাল্যকাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত তাদের সে শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়াইছে জামায়াত। জামায়াতের টাকা-পয়সায় শিক্ষিত হয়ে, এ মুহূর্তে প্রকাশ্যেই তারা জামায়াতের কথা বলত; কিন্তু প্রকাশ্যে জামায়াতের কথা বলার রাজনৈতিক সুযোগ নাই বিধায় তারা খুব ট্যাকটফুলি যেসব কথাবার্তা বলে আর যেসব ওয়াজ করে, আর যে সমস্ত হাদিস-কোরআন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়, একটাও সত্য না। একটাও সত্য না কথাটা বলাটা বেশি হয়ে গেল, অধিকাংশই মিথ্যা কথার আশ্রয় নিয়ে তারা কিন্তু আজেবাজে কথাবার্তা বলে। আপনাদের কাছে আমার আবেদন, কোনোমতেই যেন আমাদের কোনো নিজস্ব এলাকায় ঢুকতে পারে নাই। অনেক কৌশলে তারা চলতেছে। এই কৌশলটা আমাদের ধরতে হবে। তাদের এই কর্মকাণ্ডকে চিরদিনের জন্য বাংলাদেশ থেকে বিতারিত করতে হবে। আপনার প্রশ্নে আমি খুব এবং উই আর ওয়ার্কিং।’
শেখ মো. আবদুল্লাহ আরো বলেন, ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্যগুলো সরকারের নজরে এসেছে। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সরকার। এসব বক্তাকে সামাজিকভাবে প্রতিহত করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মির্জা আজম, জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. এনামুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বাছির উদ্দিন প্রমুখ।
পরে মেলান্দহ উপজেলায় জামিয়া হুসাইনিয়া মাদ্রাসার ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে উমির উদ্দিন পাইলট স্কুল মাঠে আয়োজিত দুদিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলনের উদ্বোধন করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ ‘জামায়াতের প্রোডাক্ট’ বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার জবাব দিয়েছেন মিজানুর রহমান আজহারী। তিনি বলেছেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ট বা প্রোডাক্ট নন। নিজের চিন্তা আর মতের বিরুদ্ধে গেলেই এ দেশে একটা স্বস্তা ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর সেটা হলো ‘জামায়াত-শিবির’।
গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১২টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এমনটি বলেন আজহারী। তাঁর সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
“আমি কোন দলের এজেন্ট বা প্রোডাক্ট নই। আর কোন রাজনৈতিক দলের অর্থায়নে আমার শিক্ষা জীবনও কাটেনি। মিথ্যাচার যেন এদেশে মহামারিতে রুপ নিয়েছে। আর সেটা যখন প্রকাশ্যে, গণমাধ্যমে, দেশের কোন উচ্চ পদস্থ দায়িত্বশীলের মুখ থেকে প্রকাশ পায়, তখন আফসোস আর হেদায়েতের দোয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
নিজের চিন্তা আর মতের বিরুদ্ধে গেলেই এদেশে একটা স্বস্তা ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়। আর সেটা হল “জামাত শিবির”। এবার আপনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হোন অথবা মনেপ্রাণে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক হোন। দ্যাট ডাজেন্ট মেটার। ভিন্নমতকে দমনের এই অপকৌশল পুরো জাতির ভাগ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
একজন দা’ঈ ইলাল্লাহর কোন দল নাই। তিনি সকল দলের, সকল মানুষের। তাদেরকে দলীয়করণ না করে ব্যাপক ভাবে দ্বীনের খেদমতের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। দেশের সব দলের মানুষ যেন তাদের দ্বারা আলোকিত হতে পারে সেটার পরিবেশ থাকা উচিত।
আমি সরকার বিরোধী নই। আমি অন্যায় বিরোধী। তাই, কোন অন্যায় দেখলে সে ব্যাপারে কথা বলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এবার সে অন্যায় যেই করুক না কেন, যে দলই হোক না কেন।
ব্যক্তিগতভাবে, এদেশের রাজনীতিতে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। স্যোশাল এক্টিভিটি ও দা’ওয়াহ এক্টিভিটি এদুটি কাজই হল আমার আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
আমার মিশন হল এদেশে ইসলামের মধ্যমপন্থার সৌন্দর্য্যকে প্রমোট করা। যেটাকে আরবীতে বলে আল-ওয়াসাতিয়্যাহ। জীবন যাপনে ভারসাম্য, চিন্তায় ভারসাম্য, কাজে ভারসাম্য, এবং আচরণে ভারসাম্যপূর্ণ মুসলিম তৈরী করা।
ভিন্ন মতের ব্যাপারে আমি বরাবরের মতই শ্রদ্ধাশীল। সকল মুসলমানকে আপন ভাইয়ের মত শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি। তাদের নাজাতের জন্যে মন ভরে দোয়া করি। কারো পিছু লেগে থাকা, কাদাছোড়াছোড়ি করা এবং কোন মুসলিম ভাইয়ের ব্যাপারে অন্তরে হিংসা পুষে রাখা পছন্দ করিনা। কারণ ইসলাম আমাকে এটা শিখায়নি। আর প্রিয় নবীর আদর্শও এমনটি নয়।
আমি চাই বিভিন্ন ঘরনার আলেমরা সহনশীলতার ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের চর্চা করুক। তাদের উদারতার প্রভাব পরুক দেশের সকল শ্রেনীর মানুষের মাঝে। সংকীর্নতা আর হীনমন্যতা পরিহার করে, দ্বীনের সকল দ্বায়ীরা কুরআন সুন্নাহর সুধা বিলাতে থাকুক পুরো দেশ জুড়ে, পুরো পৃথিবী জুড়ে।”