আফগান শরণার্থী গ্রহণ : ‘মার্কিন প্রস্তাব বন্ধুসুলভ, আমাদের সক্ষমতা নেই’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানিস্তানের পালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানির সমর্থক সেদেশের এমন নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল ওয়াশিংটন। ঢাকা এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অত্যন্ত ভালো বন্ধুরাষ্ট্র। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো ও সুদৃঢ়। বন্ধুত্বের এ দাবি নিয়েই ওয়াশিংটন গত ১৪ আগস্ট আমাদের কাছে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাবে ওয়াশিংটন আমাদের অনুরোধ জানিয়ে বলেছে, আফগানিস্তানের কিছু নাগরিককে কিছু সময়ের জন্য আশ্রয় দিতে। বন্ধুত্বের নজির হিসেবে আমাদের উচিত ওয়াশিংটনের এ অনুরোধ রক্ষা করা। আমাদের সক্ষমতা না থাকায় আমরা তাদের এ অনুরোধ রক্ষা করতে পারিনি। আমাদের এখন এ সক্ষমতা নেই।’
প্রস্তাবের বিস্তারিত তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে- এ প্রসঙ্গ তুলে ওয়াশিংটন তার প্রস্তাবে আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের সমর্থক ও সেদেশে অবস্থানকারী যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সহায়তাকারী এমন আফগান নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ করেছে। ওয়াশিংটন আরও বলেছে, আফগান নাগরিকদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিলে রোহিঙ্গাদেরসহ সবাইকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা এ ধরনের অনুরোধ কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারি না। এটা আমাদের পক্ষে সম্ভবও নয় বলে জানিয়ে দিয়েছি। কারণ আমরা এমনিতেই ১১ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে মহাঝামেলায় আছি।’
ড. মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার আগেও মিয়ানমার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আমাদের এভাবেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। চার বছর আগে তারাও বলেছিল, সাময়িক সময়ের জন্য রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে। আমরা ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় দিয়েছি। সবাই শুধু প্রশংসাই করছে। তাদের নিরাপত্তা দিয়ে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে কেউ কিছু বলছে না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি আমাদের কাছে একটি প্রস্তাব দিয়েছে- তারা আমাদের দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পড়ালেখা শিখাতে চায়। সব খরচ তারা দিবে। আমি বললাম, আপনারা রাখাইনে যান। সেখানে এখনও ছয় লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের লেখাপড়া শেখান। তারা বলল, না। আমাদের প্রজেক্ট বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য। তখন আমি বললাম, তাহলে তাদেরকে মিয়ানমারের কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা দেন, যাতে তারা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে শিক্ষা অর্জন করতে পারে। তারা রাজি হল না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এসব কারণে আমরা বহু চিন্তা-ভাবনা করে দেখেছি, আমাদের আর কাউকে আশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই।’